যেসব আইনে সাংবাদিক নিপীড়নের ধারা আছে, সেগুলো (ধারা) এখনই বাদ দিয়ে পরবর্তী সময়ে তা সংস্কারসহ বেশ কিছু প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকরা এই প্রস্তাব দেন। এসময় অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনায় ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি এবং দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছেন, ‘আমরা সম্পাদকরা একসঙ্গে হয়েছিলাম। আমরা ড. ইউনূস ও তার সরকারের যে কর্মকাণ্ড, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা চাই বাংলাদেশে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হোক। একজন সম্পাদক হিসেবে আমি প্রশ্ন উত্থাপন করি, সাংবাদিকদের নিশ্চয়তা ও যত্রতত্র যে খুনের মামলা হচ্ছে সেটা যেন বন্ধ করা হয়। এ ব্যাপারে সরকার যেন সুস্পষ্ট একটি ব্যবস্থা নেয়। সাংবাদিকদের যদি কোনো দোষ থাকে, তারা যদি দুর্নীতিতে জড়িত থাকে, তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হবে; কিন্তু এভাবে যেন না হয়।’
মাহফুজ আনাম আরও বলেন, ‘আরেকটি কথা বলেছি, বাসস, বিটিভি ও রেডিও, যেটা সরকারের নিয়ন্ত্রণে, এদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হোক। পেশাগতভাবে তারা যেন তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
মিডিয়া নিষ্পেষণের জন্য যত কালাকানুন যেমন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট, এ ধরনের সব আইন বাতিল করার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে মাহফুজ বলেন, ‘অ্যাটলিস্ট এই মুহূর্তে যেন ঘোষণা দেওয়া হয় যে, এই আইনগুলোতে সাংবাদিকদের নিপীড়নের যে ধারাগুলো আছে এগুলো কার্যকর হবে না এবং এটার রিফর্মটা ওনারা সময় নিয়ে করবেন। এখানে আরও প্রস্তাব এসেছে যে, কনস্টিটিউশনাল রিফর্ম—এখানে প্রধান উপদেষ্টা যদি মনে করেন, এর জন্য একটি গ্রুপ করে দিয়ে বা কমিটি করে দিয়ে সব ধরনের আইনের পরিবর্তন জুডিশিয়ারির ইনডিপেনডেন্স, পুলিশ রিফর্ম, এগুলোর সব কিছু একটি গ্রুপের কাছে বা বিভিন্নভাবে হতে পারে। অর্থাৎ আমরা এগুলোর পরিবর্তন চাই, গণতান্ত্রিক রিফর্ম চাই।’
ড. ইউনূস সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করেন জানিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের কাছে উনার বিশেষ আবেদন হচ্ছে, আমরা যেন আমাদের লেখনির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করি। উনি আমাদের আহ্বান করেছেন যে, এই সরকার পরিচালনার সব ক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি যেন আমরা ধরিয়ে দিই। এই সরকারের ভুল-ত্রুটি হলে আমরা যেন নির্দ্বিধায় সেটা কাগজে ছাপি এবং এই সরকারকে সাহায্য করি।
বৈঠকে সম্পাদকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবির, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, সংবাদের সম্পাদক আলতাশ কবির, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, আমাদের সময়ের সম্পাদক আবুল মোমেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাদক ইনাম আহমেদ, কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, দেশ রূপান্তরের সম্পাদক মোস্তফা মামুন, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, প্রতিদিনের বাংলাদেশের সম্পাদক মোস্তাফিজ সফি, করতোয়া সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, পূর্বকোণের সম্পাদক ডা.ম রমিজউদ্দিন চৌধুরী।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম