হাতির ঝিল, বিজিএমইএ ভবন না ভেঁঙে একটা সরকারী শিশু হাসপাতাল করে দিন।
ভবনের সামনে একটা দৃশ্যমান বড় বিলবোর্ড এ ভবনের ইতিহাস লেখা থাকবে। থাকবে ভবন তৈরিতে হওয়া অনিয়ম এর বর্ননা, ভবন বাজেয়াপ্ত করার কারন এবং রায়ের একটা সংক্ষিপ্ত বিবরন।
আইন না মানার এই দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির প্রতীক হয়ে থাকবে চোখের সামনে আজীবন, যেন একটা ঐতিহাসিক রায়ের স্মৃতিস্তম্ভ ।
ভেঁঙে ফেললে মানুষ ভুলে যাবে অল্প দিনেই এবং আবার একই অন্যায় করবে, এভাবেই সরকারি জমি, নদী নালা,খাল, বিল, হাওর-বাওর,পাহাড় – টিলা, বনভুমি ইত্যাদী দখল করবে। ওটাকে শাস্তি স্বরুপ বাজেয়াপ্ত করে ন্যায় বিচারের স্মারক হিসাবে টিকিয়ে রাখতে হবে। মানুষ অনন্ত কাল ধরে দেখবে এবং জানবে কেন ওটাকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল।
আর শিশু হাসপাতাল কেন এত কিছু বাদ দিয়ে ? কারন শিশুরা আমাদের আগামী প্রজন্ম, তারা শিশুকাল থেকেই জানবে বিজিএমইএ এর মত একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানও অন্যায় করে পার পায় নাই। শিক্ষা টা প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলতেই থাকবে। প্রতি বছর যে পরিমাণ শিশু অর্থাৎ আগামী প্রজন্ম এখানে যাতায়াত করবে এবং নিয়ম যে মানতে হয় সেটা জানবে সেটা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান করলে ততটা বেশী হবে না।
বিল্ডিংটার দাম ৩০০ কোটি টাকারও বেশি, বেআইনি কে আইনসিদ্ধ করতে বলছি না। ওটাকে বাজেয়াপ্ত করে একটা ভালো কাজে লাগাতে বলছি এবং ভবনটা অনন্ত কাল দাঁড়িয়ে থাকবে সাক্ষীর মত ন্যায় বিচারের ইতিহাস হয়ে এবং ভাঁঙার খরচটাও বাচবে। ভাঁঙার পর কংক্রিটের আবর্জনা যেখানে ফেলবে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট হবে।
আমাদের এই গরীব মানুষের দেশে বাচ্চাদের তেমন ভালো কোন হাসপাতাল নেই, যা আছে অপর্যাপ্ত, একটা নতুন কিছু এখন থেকে ভাবলেও তা চালু করতে যত দিন লাগবে ততদিনে চাহিদাও বাড়বে। মনে রাখতে হবে ভবনটা অনেক মুল্যবান । এর আকার এতটাই বড় যে, এখানে সকল সাবস্পেশালিটি সহ অতি আধুনিক আন্তর্জাতিক মানের শিশু হাসপাতাল এখনই চালু করা সম্ভব।
টাকা গুলো আমাদের দরিদ্র মেয়েদের ঘাম ঝরানো পরিশ্রম এর ফসল। এর বদলে হাতিরঝিলের যে সৌন্দর্য হারাবে তা অতি তুছ্য ব্যপার, অনেকটা গরীব মানুষের নতুন কাপড়ে ছোট্ট একটা রিপুর মত।
র্যাংগস ভবনের কথা মনে আছে, ভবনটা বাজেয়াপ্ত করে ভালো কাজে ব্যবহার করা যেত, কিন্তু না ভেঁঙে উপায় ছিল না, জনস্বাথেই ভাঙতে হয়েছে রাস্তার প্রয়োজনে। কিন্ত এই ভবনটি দাঁড়িয়ে থাকলে তেমন কোন জনস্বার্থ ব্যহত হবে না। র্যাংগস ভবন ভাঙার সময় দুর্ঘটনাবশত শ্রমিক মৃত্যুর কথা মনে পড়ে, সংখ্যাটা দেশের জনসংখ্যার তুলনায় কিছুই না, কিন্তু যে পরিবারের মানুষ মারা গেছে তাদের জন্য বিরাট অপূরণীয় ক্ষতি।
লেখক:
ডা সুরেশ তুলসান।
সহকারী অধ্যাপক (সার্জারী)
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ।