এবার ১০০ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নোবেলজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিচারের নামে হয়রানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে খোলাচিঠি লিখেছেন। এর আগে, এ বছরের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলাচিঠি লিখেছিলেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বরাবর ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা একটি নতুন চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসনের মতো ব্যক্তিত্ব।
খোলাচিঠিতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে তারা লিখেন, আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি। কিন্তু, সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি দেখেছি তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আর আমরা বিশ্বাস করি যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনে প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন যে, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি যে, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন। তারপর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা রাখার সুযোগসহ আপনার দেশের মধ্য থেকে নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগের পর্যালোচনা করা হবে। আমরা নিশ্চিত যে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর যে কোনও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে তিনি খালাস পাবেন। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি তিনি যেনো নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তার উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
চিঠির শেষ অংশে বলা হয়, আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতি নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আসছে দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেবো।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকিসহ শ্রম আইনে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। সর্বশেষ সোমবারও (২৮ আগস্ট) তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে ১৮টি মামলা হয়েছে।
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি