করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে ক্রেতারা তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ আদেশ বাতিল করলে শতভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এশিয়ার ৬টি দেশের পোশাক খাতের ৯টি সংগঠনের জোট সাসটেইনেবল টেক্সটাইল অব দ্য এশিয়ান রিজিয়ন (এসটিএআর)। একই সঙ্গে এই মূহুর্তে উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারিদের সাথে ক্রেতাদের দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুরোধ জানায় তারা।
বুধবার ৭ এপ্রিল এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতি দেয়া দেশগুলো হলো: বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার।
বিবৃতিতে ক্রেতা ও ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে বলা হয়: বিশ্বব্যাপী করোনার নজিরবিহীন প্রকোপের এই সময় পুরো বিশ্বকে সংকট থেকে বাঁচাতে ও পুনরুদ্ধার করার জন্য দায়িত্বশীল ব্যবসা আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী টেক্সটাইল এবং পোশাক সরবরাহকারী চেইনের ব্র্যান্ড সংস্থাগুলো, খুচরা বিক্রেতাদের এবং ব্যবসায়ীদের ক্রয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যথায় সরবরাহকারীদের লাখ লাখ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার এবং তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
ক্রেতাদের উদ্দেশে এতে বলা হয়: বৈশ্বিক ব্যবসায়ের জন্য শ্রম অধিকার, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং টেকসই সরবরাহ চেইনের প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং সম্মান করার সময় এখন।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ৬ উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ থেকে স্টার নেটওয়ার্কের অধীনে ৯টি টেক্সটাইল এবং পোশাক ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের সংস্থাগুলি, খুচরা বিক্রেতাদের এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি কয়েকটি আহ্বান জানাচ্ছি।
১. পণ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সরবরাহকারী চেইনে শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উপর সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করুন।
২. ক্রয় আদেশের শর্তগুলোকে পরিপালন করুন, দায়বদ্ধতাগুলি পালন করুন, এবং পণ্যের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে পুনরায় নতুন কোনো আলোচনা করা যাবে না। অর্থাৎ যে দামে ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে সেই দামই পরিশোধ করতে হবে।
৩. ক্রয়াদেশকৃত উৎপাদিত পণ্যগুলো নিতে হবে। উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে যেসব পণ্য সেগুলোও নিতে হবে। এসব পণ্যের আদেশ এখন আর বাতিল করা যাবে না।
৪. কোনো কারণে উৎপাদন বা বিতরণ স্থগিত বা বন্ধ করতে হলে সেক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
৫. পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিলম্বের জন্য সরবরাহকারীদের উপর কোনও দায়বদ্ধতা চাপানো যাবে না। এবং এই জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে না।
৬. অতিরিক্ত ব্যয়, জোরপূর্বক আদেশ বা অপ্রয়োজনীয় পরিদর্শন এবং নিরীক্ষণ দ্বারা সরবরাহকারীদের উপর আর কোনো অনুচিত চাপ দেয়া যাবে না।
৭. করোনায় বর্তমানে স্থানীয় পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
৮. বিরোধ যেন না হয়। তাই পারস্পরিক সহযোগিতায় বর্তমানে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমস্যা নিরসন করতে হবে।
৯. ব্যবসায়ের অংশীদারদের যথাসম্ভব সমর্থন করুন, ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন এবং সামাজিক স্থায়িত্বের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণে সহযোগিতা করুন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়: এই সংকটময় সময়ে বিশ্বব্যাপী সব দায়িত্বশীল ক্রেতাদের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত তারা।
বিবৃতি দেয়া সংগঠনগুলো হচ্ছে: বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), চায়না ন্যাশনাল অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইল কাউন্সিল ( সিএনটিএসি), গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ইন কম্বোডিয়া (জিএমএসি), মিয়ানমার গার্মেন্টস ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ), পাকিস্তান হোসিয়ারি ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএমএ), পাকিস্তান টেক্সটাইল টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন (পিটিইএ), টাওয়েল ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান (টিএমএ) ও ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ভিআইটিএএস)।