দেশের বাজারে শিগগিরই পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকায় নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিকে পেঁয়াজের দাম ৩৬-৩৭ রুপিতে নেমে এসেছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সচিবালয়ে কানাডার সাচকাচোয়ান প্রদেশের কৃষিমন্ত্রী ডেভিড মারিটের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।
নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দীর্ঘমেয়াদি হলে এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে পারে এ আশঙ্কা প্রকাশ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজনে আদা-রসুন ও অন্যান্য মসলা আমদানির জন্য বিকল্প বাজারের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে না পারলে সমস্যা হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখন পেঁয়াজ আসছে মিয়ানমার, তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তান থেকে। চীনের জন্য পেঁয়াজের বাজারে প্রভাব পড়বে না। তবে রসুন-আদাসহ অন্যান্য মসলার সমস্যা হবে কিনা সেটি দেখছি। সমস্যা হলে আমাদের বিকল্প মার্কেটে যেতে হবে। এই মুহূর্তে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। তবে আমরা লক্ষ্য রাখছি যে কি ধরনের সমম্যা আসতে পারে।
রসুনের দাম বেড়ে ২০০ টাকা হয়ে গেছে- এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে খুব সিরিয়াসলি নজর রাখছি। পেঁয়াজেও সুযোগ নিয়েছিল, এখনো ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছে। সমস্যা একটু হলেই তারা সুযোগ নেন।
তিনি বলেন, ভারতের নাসিকের যে মার্কেট থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করি সেখানেও পেঁয়াজের দাম কমেছে। কিন্তু ওরা এখনো সরকারিভাবে পেঁয়াজ রফতানির সিদ্ধান্তটা নেয়নি। গতকাল নাসিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৬-৩৭ রুপি। কলকাতার বাজারে দাম ছিল ৪৫ রুপি, আমাদের টাকায় সেটা ৫৫-৬০ টাকা।
(ভারতে) কৃষকদেরও চাপ রয়েছে, তাই সেখানে দাম ২৫-৩০ টাকায় নেমে এলেই ভারত হয়তো রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেবে। ভারতের মোট পেঁয়াজের ৩৮ শতাংশ হয় নাসিকে। নাসিকের পেঁয়াজই আমরা আমদানি করি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভারতের উত্তরের যে পেঁয়াজ, সেগুলো তারা রফতানি শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের জনগণ সে পেঁয়াজ খায় না। আমরা নাসিকের পেঁয়াজই পছন্দ করি। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি তারা নাসিকের পেঁয়াজ থেকে কখন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। দামটা আরও একটু কমলে তাদের নিজস্ব চাপেই তারা (নিষেধাজ্ঞা) প্রত্যাহার করবে। গতকালই আমাদের দূতাবাস থেকে চিঠি পেয়েছি। তারা এসব কথাই লিখেছে।
তিনি বলেন, আমাদের পেঁয়াজের ঘাটতি ৮-৯ লাখ টন। বছরের পর বছর যদি পরের ওপর নির্ভর করতে হয়, তাহলে যখনই ভারত রফতানি বন্ধ করে দেবে, তখনই সমস্যা দেখা দেবে। তাই স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে কৃষকদের দাম পেতে হবে। ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করবে না।
সোমবার ঢাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এবার কৃষক যদিও দাম পেয়েছে। একই এলাকায় পাশাপাশি বাজারে কেজিতে ২০-৩০ টাকা পার্থক্য থাকে, এটা হওয়া উচিত নয়।
অসাধু ব্যবসায়ীদের বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, দাম বেশি রাখায় ৩ হাজার ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা খুব শক্ত অবস্থানে যেতে চাই। কিন্তু কখনো কখনো ব্যবসায়ীরা এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে, টোটাল মার্কেট থেকেই আউট করে দেন। এজন্য আমাদের আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটা হচ্ছে সাপ্লাই বাড়ানো। তাহলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিতে পারবেন না।
দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করার পর হুট করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ঢাকার বাজারে। ২৯ সেপ্টেম্বর পাশের দেশটি রফতানি বন্ধ করে দিলে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। স্বাভাবিক বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা থাকলেও মাস শেষে শ’ ছাড়িয়ে যায়। অক্টোবরে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে। ওই মাসের শেষভাগে সরকার আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে আমদানি বাড়িয়ে পেঁয়াজের দাম ফের ১০০ টাকার কাছাকাছি নিয়ে এলেও ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানায় সেই চেষ্টা ভেস্তে যায়। ক’দিনের মধ্যেই ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম। সব রেকর্ড ভেঙে একপর্যায়ে ২৫০-২৬০ টাকা পর্যন্তও বিক্রি হয় পেঁয়াজ।
জনসাধারণের ভোগান্তি বিবেচনায় নিয়ে পেঁয়াজ সংকট কাটাতে উদ্যোগী হয় সরকার। কোনো দিন পেঁয়াজের ব্যবসা না করা বড় বড় কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানিও উদ্যোগী হয়ে চীন, মিসর, তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। তার ফল কিছুটা হলেও এখন মিলছে বাজারে।সূত্র : সময় নিউজ