খুলনার পাইকগাছায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা দরিদ্র এক প্রান্তিক কৃষকের ১ বিঘার বেশী জমির সবজি ক্ষেতের উচ্ছে, কুমড়া ও খেরাই গাছ রাতের আঁধারে কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এতে মোটা অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই কৃষক পরিবার। গত শনিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে উপজেলার গড়ইখালী ইউনিয়নের উত্তর কুমখালী গ্রামে এ ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষক নিরাপদ মন্ডলের ছেলে সুকেশ কুমার মন্ডল।
সরজমিনে দেখা যায়, সুকেশ মন্ডল ধার দেনা করে ১ বিঘার বেশী জমিতে করোলা, উচ্ছে, মিষ্টি কুমড়া ও খেরাই চাষ করে। সেসব কুমড়া গাছে সবেমাত্র ফুল আসতে এবং কিছু কিছু গাছের কুমড়া বড় হতে শুরু করেছে। একবার প্রায় ১০ মণ করোলা-উচ্ছে উঠানো হয়েছে। শনিবার ছিলো সবজি উঠানোর দিন।
কৃষক সুকেশ মন্ডল জানান, আমার একটি চা দোকান রয়েছে। দোকান থেকে ফিরে রাত সাড়ে দশটার দিকে সবজি ক্ষেতে গিয়ে ছিলাম। সেখান থেকে ফিরে বাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল ৫ টার দিকে আমার পার্শ্ববর্তী সবজি ক্ষেতের মালিক সঞ্জয় ও উজ্জ্বল মোবাইলে জানায় আমার সবজি ক্ষেত কে বা কারা কেটে সাবাড় করে দিয়ে গেছে। তাৎক্ষণিক আমার মা কে নিয়ে ক্ষেতে যাই। দেখি সব করোলা উচ্ছে, মিষ্টি কুমড়া ও খেরাই গাছ গোড়া থেকে কেটে ফেলে দলা পাকিয়ে রেখে গেছে। তাতে আমার প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর কে জানালে বাইনবাড়িয়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পুলিশ পরিদর্শক আহাদ, এএসআই ফরহাদ আহম্মেদ এবং উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন ও আকরাম হোসেন ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকেই ছুটে আসেন তার কুমড়া ক্ষেতে। এসে সব কুমড়া গাছের গোড়া কাটা দেখে তারা হতবাক হয়ে যান। তারা শুধু বলতে থাকেন, গাছের সাথে এ কেমন শত্রুতা।
উপজেলার কুমখালী গ্রামের বাসিন্দা ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী শান্ত মন্ডল জানান, কৃষক সুকেশ একজন সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ। এ ধরনের একজন মানুষের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করে ফেলল দুর্বৃত্তরা। এটা মেনে নেয়া যায় না। এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হওয়া দরকার।
উজ্জ্বল, সঞ্জয় নামে তাদের প্রতিবেশী জানান, সবজি চাষ করেই সুকেশ এর সংসার চলে। এই অপূরণীয় ক্ষতি তিনি কিভাবে পূরণ করবেন!
সুকেশ জানান, আমার বাবা ব্রেইন স্ট্রোকের এবং আমার স্ত্রীও গুরুতর অসুস্থ। পরিবারের পাঁচ টা মুখ এই সবজির আয়ের উপর নির্ভরশীল। আমার বহু কষ্টের সবজি ক্ষেতের গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। গাছের সবজি আর বিক্রি করতে পারব না। আমার যে সর্বনাশ হয়ে গেল। তিনি আরও আক্ষেপ করে বলেন, গত বছরও আমার ক্ষেতে ঘাস স্প্রে করে সব গাছ সহ ফসল নষ্ট করে দিয়েছিল। থানায় জিডি করেছিলাম। অদৃশ্য কারণে কোন প্রতিকার পাইনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার অসীম কুমার দাশ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সুকেশ কে এ বিষয়ে পাইকগাছা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওবাইদুর রহমান জানান, সবজি ক্ষেতে ক্ষতিসাধনের বিষয় তদন্ত চলছে।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ১০:৫০ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ বাপ্পি