তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ইউপি পরিষদ নির্বাচনে পরিবেশ মন্ত্রীর শপথ করানোর পরও ১০টি ইউপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিতরা ‘বিদ্রোহ প্রার্থী’ হিসাবে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ অনেকে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। গোপনে শুরু করেছেন প্রচার প্রচারনা। বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানরাও রয়েছেন। যারা দলীয় মনোয়ন পাননি৷
জানা গেছে, গত শনিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে বড়লেখা পৌর শহরস্থ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক বিশেষ সভায় উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়৷ ৫৩ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য জীবন বৃত্তান্ত জমা দেন ৷ পরে সেখান থেকে জীবন বৃত্তান্ত যাচাই বাচাই শেষে ৩৮ জন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়।কেন্দ্র থেকে গত মঙ্গলবার দুপুরে ১০টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয় ৷ এদিন দল যাকে মনোনয়ন দেবে এর বাহিরে কেউ যাতে বিদ্রোহী প্রার্থী না হয় সেজন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের শপথ করান বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি। কিন্তু শপথ করানোর পরও উপজেলার দশটি ইউনিয়নের ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার প্রস্তুতি গ্রহন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১ নং বর্ণি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শামিম আহমদ। ২ নং দাসেরবাজার ইউনিয়নে দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন উপজে’লা যুবলীগের সহ-সভাপতি জিয়াউর রহমান। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান মাতাব উদ্দিন মাতাই। ৪নং উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিক উদ্দিন। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও ব্যবসায়ী আতাউর রহমান সৈয়দ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মুমিনুর রহমান টনি। ৫ নং দক্ষিন শাহবাজপুর ইউনিয়নে দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান নাহিদ আহম’দ বাবলু ৷ এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শাহাব উদ্দিন। ৬ নং সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সদস্য সালেহ আহম’দ জুয়েল। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন। ৭ নং তালিমপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান সুনাম উদ্দিন (সোনাই বন্ধু) ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এখলাছুর রহমান। ৮ দক্ষিণ ভাগ (উত্তর) ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন এনাম উদ্দিন। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। ৯ নং সুজানগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম নিকু। এই ইউনিয়নে এখন পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে কারও নাম শুনা যায়নি। ১০ নং দক্ষিনভাগ (দক্ষিণ) ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোয়ন পেয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী ও ইউপি মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতানা কোহিনুর সারোয়ারী। এই ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও এখন পর্যন্ত কেউ মনোনয়ন দাখিল করেনি। এখনও মনোনয়ন পত্র দাখিল কিংবা প্রত্যাহারের সময় আছে। শেষ পর্যন্ত কেউ যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে মাঠে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।