পদ্মা সেতুর পর সবচেয়ে বড় মহাপরিকল্পনা তিস্তা ব্যারেজ
প্রকল্প
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণাধীন অবকাঠামো পদ্মা সেতুর সর্বশেষ স্প্যানটি ১০ই ডিসেম্বর স্থাপন করার মধ্য দিয়ে সেতুর মূল কাজটি শেষ হয়ে গেল, অর্থাৎ কাঠামো তৈরি হয়ে গেল। এর মাধ্যমে সেতুটি পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো।এই স্প্যানটি স্থাপন করার মাধ্যমে পদ্মা সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে।
আর পদ্মা সেতুর পর সবচেয়ে বড় মহাপরিকল্পনা হচ্ছে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প। মূলত তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে নদীটির বিস্তৃত ব্যবস্থাপনা ও পুনরুজ্জীবনে একটি প্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সরকার ‘তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন’ নামে এই প্রকল্পের ব্যয় ধার্য করেছেন আনুমানিক আট হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এ.এম. আমিনুল হক এই তথ্য জানিয়েছেন।
আশা করা হচ্ছে যে, প্রকল্পটি চীনের ঋণ সহায়তায় পরিচালিত হবে। ইতিমধ্যে চীন তিস্তা নদীতে কি ধরণের প্রকল্প হতে পারে সে বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা নেয়ার জন্য জরিপ পরিচালনা করেছে বলে জানা যায়।
এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনাকালীন সময়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মি. হক বলেন, “চাইনিজরা ওরা নিজেরাই তিস্তা নদী নিয়ে স্টাডি-টা করেছে সম্পূর্ণ তাদের নিজেদের খরচে। আমরা ইআরডিকে জানিয়েছি যে অর্থায়নের ব্যাপারে বিদেশি সহায়তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এখন চাইনিজরা যদি ইআরডির সাথে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে হয়তো এটা আগাবে।”
বর্তমানে পরিকল্পনাটি ইআরডির আওতায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৫৪টি নদী প্রবেশ করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে তিস্তা। আর এটি মূলত ভারতের সোলামো লেক থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপরে এটি চিলমারির কাছে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেইজিং সফরের সময় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আরো কয়েকটি বিষয়ে চীনের সহায়তা চেয়েছিলেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট এন্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্ট।
তিস্তা মহাপ্রকল্প’ বাস্তবায়নের অপেক্ষা
চীনের টাকায় তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন এবং তিস্তা চুক্তিসহ ৬ দফা দাবিতে তিস্তা নদী পারের লাখো মানুষ থমকে দাঁড়িয়েছিলেন। রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা দোকানপাট বন্ধ রেখে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন। তিস্তা নদীর দু’পাড়ে দোকানপাট বন্ধ রেখে এই ‘স্তব্ধ’ কর্মসূচি ৫ জেলায় প্রবাহিত তিস্তা নদীর প্রায় শতাধিক পয়েন্টে পালন করা হয়।
কর্মসূচিতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের বক্তারা বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। নদীপাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে দ্রুত তিস্তা চুক্তি সই করতে হবে। দিল্লির তাঁবেদারী বন্ধ করে সরকার তিস্তা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ অহেতুক বিলম্ব করা হচ্ছে। তিস্তা চুক্তির জন্য ভারতকে চাপ দেয়া উচিত; আবার দ্রুত চীনের টাকা তিস্তা মহাপ্রকল্প শুরু করা উচিত। নাহলে তিস্তা অববাহিকা উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে। চীনের টাকায় তিস্তা প্রকল্প হলে নদীতে ১২ মাস পানি থাকবে; মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তিস্তা মহাপ্রকল্পের কাজ দেখতে মুুখিয়ে আছেন নদীপাড়ের মানুষ।