একদিকে যখন দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা, সেসময় ৬৫টি সেবা ও পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বাড়ানোর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় আরও একদফা বাড়তে যাচ্ছে বলে ক্ষোভ বাড়ছে সব মহলে। এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরিবর্তে উলটো রাজস্ব আয় কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা, একই সঙ্গে অর্থনীতিতে নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
এসব পণ্য ও সেবার তালিকায় রয়েছে-জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, জুস, ফলমূল, পোশাক, টিসু পেপার, সাবান, ডিটারজেন্ট পাউডার, রেস্তোরাঁর খাবার, বিমানের টিকিট ইত্যাদি। স্বভাবতই ভ্যাট হার বাড়ানোর ফলে এসব পণ্য ও সেবার দাম আরও বাড়বে। ফলে তা সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নমধ্যবিত্তের ওপর ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেবে।
জানা যায়, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভ্যাট হার বাড়াতে চায়নি। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতেই ভ্যাট বাড়ানোর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সম্প্রতি ঋণের শর্ত হিসাবে আইএমএফ ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ করার শর্ত দিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ নতুন ভ্যাট হারের বিষয়টিতে অনুমোদনও দিয়েছে।
বাংলাদেশকে দেওয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারে চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ঘুরে গেছে আইএমএফের একটি মিশন। চলমান এই ঋণ কর্মসূচির আকার আরও ৭৫ কোটি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। এ অর্থ দিতেও সম্মত হয়েছে আইএমএফ; তবে এজন্য রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মতো কিছু কঠোর শর্ত দেয় আইএমএফ। জানা গেছে, ঋণ দিতে আইএমএফ বাংলাদেশকে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ২ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে, টাকার অঙ্কে যা ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ টাকা চলতি অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে যোগ হবে। এ কারণেই বাড়ানো হয়েছে ভ্যাট হার।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, কর বাড়লেও জিনিসপত্রের দামে প্রভাব পড়বে না। আমরা যেসব জিনিসের ওপর কর বাড়াচ্ছি, এগুলো মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই কম গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই, এমনকি নেপাল, ভুটানেও, বাংলাদেশের মতো এত কম কর (ট্যাক্স) নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে আমরা সব সময় বলেছি, সেখানে আমরা প্রায় জিরো করে নিয়ে আসব।
এই সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনে হয় না কষ্ট হবে।
অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই মুহূর্তে ভ্যাট হার বাড়ানো হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এমনিতে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। সেখানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, এলপি গ্যাস, গুঁড়া দুধ, বিস্কুট, আচার, টমেটো কেচাপ/সস, জুস, টিস্যু পেপার, ফলমূল, সাবান-ডিটারজেন্ট পাউডার, মিষ্টি, চপ্পলের ওপর ভ্যাট হার বৃদ্ধি মানুষকে আরও চাপে ফেলবে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত সুফল বয়ে আনবে না।
আজ ২২শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | ৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৫:২২ | সোমবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি