তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের রাজনগরে চতুর্থ ধাপে ৮ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত, বিদ্রোহী, স্বতন্ত্রসহ ৩৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিদ্রোহীর দাপটে আওয়ামী লীগের ভোটার বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে সুবিধা পেতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। রাজনগর উপজেলার ৮ ইউনিয়নের ৭টিতে বিদ্রোহীদের দৌরাত্ম্যে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। কোনো কোনো ইউনিয়নে একের অধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ঘরের আগুনে পুড়ছে আওয়ামী লীগ। এদিকে বিদ্রোহীদের কোণঠাসা করতে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ফতেপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বখতিয়ার উদ্দিনের সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য নকুল চন্দ্র দাশ। এছাড়া স্বতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি প্রার্থী রয়েছেন আমির আলী ও মোহাম্মদ শামছুদ্দিন।
উত্তরভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সোহেল আলমের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ শাহিদুজ্জামান বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী রাজা মিয়া, স্বতন্ত্র প্রার্থী এস মিয়া, সৈয়দ আবুল কালাম, জুনেদ আলী, আওয়ামী লীগ সমর্থক দীগেন্দ্র চন্দ্র সরকার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
মুন্সিবাজার ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান ছালেক মিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেল হোসেন ও আবুল হোসেন।
পাঁচগাঁও ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুন নূর আহমদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সিরাজুল ইসলাম ছানা নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লেচু মিয়া, অতষী বরণ ভট্টাচার্য, সাইদুল ইসলাম বাচ্চু, জহিরুল ইসলাম বাচ্চু একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
রাজনগর সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম সোহেলের বিপরীতে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন গত জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগে যোগদান করা বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও লড়ছেন শিপলু আহমেদ, জুবায়ের আহমদ চৌধুরী।টেংরা ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাহমুদ উদ্দীনের সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী টিপু খান, আকমল হোসেন, আরজান খান জাপান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম আহমেদ।
তবে কামারচাক ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউর রহমান, মান্না ছালামত, ইনছান মিয়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের আতাউর রহমান এখন একমাত্র প্রার্থী।
মনসুরনগর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত ভোটের মাঠে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উপজেলা ছাত্রলীগের এক সময়কার নেতা সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন হুমায়ুন কবির ও আজিদ উল্লাহ।
রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মিলন বখত বলেন, যারা কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশক্রমে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী কিংবা তাদের অনুসারী আওয়ামী লীগের যারাই দলীয় প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার পথে অন্তরালে বিরোধী হিসেবে কাজ করবেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মতো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তৃণমূল নেতাকর্মীর সমন্বয়ে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারা ঐকান্তিকভাবে কাজ করে বিদ্রোহীদের প্রতিহত করবে।