মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘ দিন যাবত ডাক্তার ও কর্মচারী স্বল্পতা, কর্মস্থলে নিয়োজিত ডাক্তারদের চরম অবহেলা ঔষধ সংকটসহ নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে চিকিৎসা কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ফলে সাধারাণ মানুষ উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, ২০০৫ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নিত হওয়ার পর অবকাঠামোগত সকল ব্যবস্থা থাকলেও বিশেষায়িত হাসপাতালের কার্যক্রম চালু হয়নি। ফলে মূল্যবান ইনকিউবেটর, অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি ও এ্যানেসথেসিয়া মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি গুলো সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায় বাক্স বন্ধী হয়ে পড়ে আছে। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটিও দীর্ঘ দিন যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি ও টেশনিশিয়ান থাকলেও অজ্ঞাত কারণে রোগীরা এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উক্ত হাসপাতালে রোগীদের সেবার কাজে নিয়োজিত দুটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত একটি এ্যাম্বুলেন্সও নাকি প্রেষণের মতই নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের খাবারের মান নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ। ইমারজেন্সী বিভাগেও রয়েছে নানা দুর্নীতি। প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলেও টাকা ছাড়া হয়না। ইমারজেন্সী বিভাগে সেবাদানকারী ব্যক্তিরা রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ যেন নিত্য দিনের ঘটনা। ডাক্তারের হাতে রোগী প্রহৃত। অত:পর দেন-দরবার এমন ঘটনাও ঘটেছে হাসপতালে।
উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারি সার্জন পদে ডা. শুক্লা মৌমিতা কাগজে কলমে দায়িত্বে থাকলেও তিনি বেশীরভাগ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। সেখানেও রয়েছে তার বিরুদ্ধে রোগীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ। ডা. শুক্লা মৌমিতা দায়িত্ব পালনের সময় জ্বর,কাশি ও শ্বাস কষ্ঠের রোগী চিকিৎসা নিতে আসলে ইমারজেন্সী বিভাগের জানালা দিয়ে নিতে হয় সেবা।
এই হাসাপাতালে ডাক্তারের ২৩টি পদের মধ্যে ১২ টি পদই দীর্ঘ দিন যাবত শূন্য রয়েছে। কাগজে কলমে ১১জন কর্মরত থাকলেও মেডিকেল অফিসার ডা. মাফজুল্লা কবীর ২০১৩ সালের ০১ নভে¦র থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন ও এমও (আরএমও পদের বিপরীতে) ডা. বিপাশা মজুমদার দীর্ঘদিন যাবত সংযুক্তি হিসেবে অন্যত্র চলে গেছেন। অন্যান্য ডাক্তাররা বেশির ভাগ সময়ই প্রাইভেট প্রেক্টিসে ব্যস্থ থাকায় হাসপাতালালে ভর্তিকৃত রোগীরা প্রয়োজনে তাদের খুঁজে পায়না।
হাসপাতালের গিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদরের রমিজ উদ্দিন (৬৩) বিশ্বনাথপুর গ্রামের ইউনূছ আলী (৭০), মেঘশিমূল গ্রামের আলতু (৫৫), ধোবারুহী গ্রামের আছিয়া খাতুনসহ (৪৫) বেশ কয়েকজন রোগী গত কয়েকদিন যাবত ভর্তি আছেন। তারা নানা অভিযোগ তুলে ধরে আমাদেরকে জানান, সকালে হাসপাতাল থেকে তাদের নাস্তা দেয়া হয় চিড়া ও গুড়। দুপুরে মোটা চাউলের ভাত পাংগাস মাছের ঝৌল ও ডাল তাও হাসপাতালের বারান্দায় খোলা মেলা এ খাবার গুলো রাখা হয়। সেখান থেকেই নিজেরাই খাবার সংগ্রহ করেন। রোগীরা প্রয়োজনের সময় কোন ডাক্তার খুঁজে পায়না। তেমন কোনো ঔষধ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়না। সব ঔষধ বাহির থেকে কিনতে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা আক্তার হাসপাতালের খাবারের মানসহ নানা অনিয়মের কিছু কিছু বিষয় স্বীকার করে বলেন, তিনি এ হাসপাতালে যোগদানের আগে হাসপাতালের অবস্থা আরও নাজুক ছিল। তিনি আসার পর হাসপাতালে ভাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণসহ চিকিৎসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত চেষ্ঠা করছেন।
আর রোগীদের সাথে ডাক্তারের অসৌজন্যমূলক আচরণের সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, এ হাসপাতালে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগী আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার না থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত সকল রোগীদেরই কম বেশী হাসপাতাল থেকে ঔষধ দেয়া হয়। কিছু কিছু মূল্যবান ওষুধ রোগীদেরকে বাহির থেকে কিনতে হয়।