মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা জেলার মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অতিরিক্ত সহাকারী জজ আদালত রয়েছে একমাত্র দুর্গাপুর উপজেলায়।
তৎকালীন সুসং পরগনার রাজাদের অনুরোধে বৃটিশ সরকার সীমান্ত এলাকার জনগণের সুবিধার্থে দূর্গাপুরে
দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালতের ব্যবস্থা করেন। তখন এই দুই আদালত একজন মুন্সেফ ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালনা
করতেন। তখনকার সময়ে এটিকে চৌকি আদালত বলা হতো। এই আদালতের মাধ্যমে সকল বিচারিক কার্যক্রম
পরিচালিত হতো।
পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলের শেষ দিকে চৌকি ভেঙে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও অতিরিক্ত
সহাকারী জজ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সেই থেকে চলে আসছে এই দুই আদালতের কার্যক্রম। সিনিয়র
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনটি পরবর্তিতে ১৯৮৫ সালে নির্মাণ করা হয়। নির্মানের কয়েকবছর যেতে
না যেতেই ভবনের ছাদের বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টার খসে পরে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ
দিয়ে পানি পরে ভিজে যায় মূল্যবান নথিপত্র। ব্যাঘাত ঘটে বিচারিক কার্যক্রমের। ভবনটি বেশ জ¦রাজির্ণ হওয়ার
কারনে যেকোন মূহুর্তে ধ্বসে গিয়ে প্রাণহানী ঘটাতে পারে অসংখ্য মানুষের। সম্প্রতি এজলাসে বিচারকের
আসনের উপর থেকে ভীমের বেশ বড় একটা অংশ ধ্বসে পরে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে পুরো আদালত ভবন। এজলাস, বিচারকের ব্যক্তিগত কক্ষ, পুলিশ ব্যারাক, আইনজীবিদের কক্ষসহ প্রতিটি কক্ষেরই ছাদ ও দরজা-জানালার বেহাল দশা। হাজতখানার দরজা জানালা ভাঙা, টয়লেট গুলোও ব্যবহার অনুপযোগী। মালখানায় ভাঙা ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। প্রায় সারা বিল্ডিং জুরেই পানি পরায় প্রতিনিয়তই নষ্ট হয় কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার ও নথিপত্র। এতে ভোগান্তীর সৃষ্টি হয়েছে ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, আইনজীবীসহ বিচার প্রত্যাশীগন। সংশ্লিষ্টদের দাবী ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন তৈরী না করা হলো, সব সময়ই ব্যহত হবে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত এর কার্যক্রম।
এ ব্যাপারে দূর্গাপুর আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মানেশ চন্দ্র সাহা জানান, ১৯৮৫ সালে
এই কোর্ট ভবনে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু ঐ সময় বিল্ডিং নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের
জেরেই এই ভবনটি এত অল্পসময়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। প্রায়ই ভবনের ছাদ ধ্বসে শরিরের উপর
পরে। সবসময় দুর্ঘটনার আতংক নিয়ে কাজ করতে হয়। বর্তমানে এই ভবনের যা অবস্থা তাতে যে কোন সময়
হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া বর্ষার দিনে এজলাসের ভিতরেও পানি পরে। যার দরুন নষ্ট হয়ে যায়
গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথিপত্র। অতি দ্রুত এই ভবনটি নতুন করে নির্মাণের কোন বিকল্প নেই।
এ ব্যাপারে আদালতের স্ট্যানো কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুর রায়হান জানান, গত তিন বছর আগে সর্বশেষ
এই ভবনের ছাদে সিমেন্টের প্রলেপ দেয়া হয়। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
ভবনটির বর্তমান অবস্থা এতটাই খারাপ, সব সময় প্রাণহানীর শংকা নিয়ে কাজ করতে হয়। তাছাড়া সরকারি
বিভিন্ন নথিপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল নষ্ট হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে নেত্রকোনা গণপূর্ত বিভাগকে
বারং বার লিখিতভাবে জানানোর পরও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না কর্তৃপক্ষ।
এব্যাপারে ঐ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হাসিনুর রহমান বলেন, ১৯৮০ সালের দিকে নির্মিত উপজেলা
কোর্টগুলোর জন্যে এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই এসব ভবনগুলো সংস্কার বা পুনঃসংস্কার করার
মত সুযোগও নেই আমাদের হাতে। এই কোর্ট বিল্ডিংটির যেসব কাজ না করলেই নয় সেসব কাজ আমি অন্য
ভাবে মেরামতের জন্যে চেষ্ঠা করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই অন্তত: সংস্কারমুলক কাজগুলো করে দিতে পারবো।