মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা শহরের কাটলি এলাকায় পারিবারিক করবরস্থানে স্বামী
গোলাম মুর্তুজা খান কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়েশা খানম (৭৪)।
গত শনিবার (২ জানুয়ারী) বাদ আছর স্থানীয় অন্বেষা স্কুল মাঠে জানাজার নামাজের আগে অতিরিক্ত জেলা হাকিম মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুল আলম জুয়েলের নেতৃত্বে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেয়া হয়। মরদেহ ঢেকে দেয়া হয় জাতীয় পতাকায়।
এসময় জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা পরিষদ, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এর আগে বেলা পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা থেকে মরদেহ নেত্রকোনা শহরের কাটলি এলাকার নিজ বাসায় এসে পৌছায়। তখন তাকে শেষবারের মত দেখতে ও শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে ছুটে যান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত রায়, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়সহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীছাড়াও হাজারো মানুষ।এসময় স্বজনদের আহাজারি ও শোকাহত এলাকাবাসীর চোখের জলে এক বেদনাবিধূর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শনিবার সকালে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে আয়েশা খানম মারা যান। আয়েশা খানমের জন্ম নেত্রকোনার সদর উপজেলার গাবড়াগাতি গ্রামে ১৯৪৭ সালের ১৮ অক্টোবর। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহ-সভাপতি আয়েশা খানম বাষট্টির ছাত্র আন্দোলন ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলনের সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নিজেকে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত করেন আয়েশা খানম।
আয়েশা খানমের ছোট ভাই নেত্রকোনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ খান পাঠান বলেন, ‘আপা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।গতকাল রাতে উনি একটু বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তাররা তাঁর মৃত্যুর খবর জানান।তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা, আদর্শ। তার নীতি নৈতিকতা, দেশপ্রেম, মানবিকতা, রাজনীতি এবং সঠিকপথে সমাজ, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা পরিবারের সদস্যরা গর্ববোধ করি। তার মৃত্যু আমাদেও পরিবারের জন্যে অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি সকলের কাছে তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্যে দোয়া চান।
তাঁর মৃত্যুতে নেত্রকোনা- ২ আসনের সংসদ সদস্য সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত রায়, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার, জেলা প্রেসক্লাব সম্পাদক শ্যামলেন্দু পাল, আয়েশা খানমের সহপাঠী নারী নেত্রী বেগম রোকেয়া, ন্যাপ সভাপতি মোজাম্মেল হক বাচ্চু।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু বলেন,‘আশেয়া খানম জীবনভর মানুষের কথা বলেছেন। তার মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রশান্ত রায় বলেন, ‘আয়েশা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবনভর আন্দোলন করেছেন। তিনি সারাজীবন অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের জয়গান গেয়ে গেছেন।’