মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এ কাজে বিদ্যুৎ অফিস থেকে কোন মিটার না নিয়ে সরাসরি বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অবৈধভাবে লাইন টেনে যাবতীয় কাজ শেষ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
অবৈধ লাইন ব্যবহার করে গত মে মাস থেকে এ পর্যন্ত দুই মাস ধরে ওই ভবন নির্মাণের যাবতীয় কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে কয়েক লক্ষ টাকার বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এ বিষয়ে কিছুই জানেনা বলছে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস।
স্থানীয়রা জানায়, দুই মাস ধরে ভবনের পাইলিং, রড কাটাসহ বড় বড় মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। এতে প্রচুর বিদ্যুৎ লেগেছে। বর্তমানে পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকদের যে ভুতুড়ে বিল এসেছে, এভাবে বিদ্যুৎ চুরির কারণেই এমনটা হয়েছে। এসব চুরি জায়েজ করতেই জনগণের উপর অতিরিক্ত বিলের বোঝা চাপানো হচ্ছে বলে তাদের অভিমত। এ কাজে বিদ্যুৎ অফিসের অসাধু কোন কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও জানায় তারা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছয় তলা ভবনের কাজ করছে বাছেত প্রকৌশলনী নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত মে মাসে কাজ শুরুর সময়ে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে পল্লীবিদ্যুতের মোহনগঞ্জ জোনাল অফিসে আবেদন করে ঠিকই। পরে অসাধু বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে রাতের আঁধারে সরাসরি খুঁটি থেকে লাইন টেনে কাজ শুরু করে দেয়। কিছু টাকা দিয়ে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক
নেতাকেও ম্যানেজ করে নেয়। এতে করে লাখ লাখ টাকার বিলের ভার বইতে হচ্ছে না।
পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন স্টাফ জানিয়েছেন, এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর আগেও এই বিদ্যালয়ের একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করেছে। ওই সময়েও তারা বিদ্যুৎ অফিস থেকে কোন প্রকার সংযোগ নেয়নি। কখনো মেইন লাইন থেকে কখনো আমাদের স্কুলের লাইন থেকে সংযোগ নিয়ে কাজ সেরেছে। ফলে তাদের কাজের কারণে আমাদের স্কুলের ৫০ হাজার টাকা বিল গুনতে হয়েছে। এবার আমরা সতর্ক হয়েছি। তাই মেইন লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছে।
স্থানীয় একজন আ. লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশাল পাওয়ারফুল। আরো অনেক জায়গায় তারা এভাবে লাইন টেনে কাজ করছে। নিউজ প্রকাশ করে তাদের কিছুই হবে না। তাদের লবিং অনেক বড়। পারলে কয়েক টাকা নিয়ে নিউজ করা বাদ দাও।
এ বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবিক মোহনগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতবড় কাজ বিদ্যুৎ অফিসের যোগসাজশ ছাড়া হয়নি। তাদের চুরির মাশুল এলাকাবাসী কেন দিবে। চুরদের হাতে বিদ্যুৎ তুলে দিয়ে সাধারণের গাড়ে সেটা চাপিয়ে দেয়া হয়। আমরা এসব আর কত সইব। কারো বাসা-বাড়িতে অবৈধভাবে রান্নার চুলা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ ঠিকই জেনে যায়। আর রাস্তার পাশে দুই
মাস ধরে সরাসরি লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে এতবড় প্রকল্প চালাচ্ছে, অথচ অফিসের লোকজন কিছুই জানে না। এটা বিশ্বাস করার মতো নয়। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিন ঘুরে কয়েকজন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ম্যানেজার রনি’কে বিষয়টি অবগত করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, আর কোন কাজ পান না, এটা নিয়ে লাগতে হবে কেন? পল্লীবিদ্যুৎ অফিস থেকে অনুমতি নিয়েই এ কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
তবে মোহনগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম বিপ্লব কুমার পাল বলেন, এটি একটি অবৈধ সংযোগ। এ কাজে তারা কোন অনুমতি নেয়নি। আবেদন করেছিল পরে আর খবর নেয়নি। অবশ্যই এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি অবগত করলে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে আশা করছি। তবে তারা যদি কোন ব্যবস্থা নিতে গাফিলতি করে,তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।