নেত্রকোণা প্রতিনিধিঃ নেত্রকোণার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমেশ্বরী নদী ছাড়া জেলার সব কয়টি নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এতে জেলার দশ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বন্দী হয়ে আছে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, জেলা আনসার ভিডিপি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলছে বানবাসি মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরন।
এ দিকে জেলার হাওর উপজেলা খালিয়াজুরীতে বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার, ত্রাণ বিতরন ও চিকিৎসা সেবা দিতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে কাজ করছেন সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে বন্যার পানিতে নেত্রকোণা-কলমাকান্দা, নেত্রকোণা-মোহনগঞ্জের রেলপথসহ জেলার অভ্যন্তরিক সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে ।
প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার ১০টি উপজেলার ৬২টি ইউনিয়ন পাহাড়িঢল ও অতিবৃষ্টিতে বন্যা কবলিত হয়েছে। ঢলের পানিতে অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলী জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য পুকুর পানিতে তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ।
এ পর্যন্ত বন্যা দূর্গত মানুষদের জন্য ৩২৪ টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাতে প্রায় ১লাখ ৫ হাজার ৯৩৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে পানি বন্দী অনেকেই যারা আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পারেনি তারা তাদের শিশুদের ও গবাদি পশু নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাছাকাছি কোন আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বা উচু কোন স্থানে। আবার অনেকেই তাদের গবাদি পশু রেখেছেন সড়কের উপর নির্মিত ব্রীজে।
এ দিকে নেত্রকোণার খালিয়াজুরীর উপজেলায় বন্যায় কবলিতদের উদ্ধার ও ত্রাণ সহায়তা দিতে সেনাবাহিনীর ১৩০ সদস্যের দলটি রবিবার স্থানীয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
এ ছাড়াও বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণের জন্য ১শ মেঃ টন চাল, ২০ লাখ টাকা ও ৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জেলা ও উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।