মো.কামরুজ্জামান, নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি : পবিত্র মাহে রমজান মাসকে সামনে রেখে নেত্রকোণায় চাহিদা বাড়ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের। এত টিসিবির ট্রাকের সামনে অসংখ্য ক্রেতার ভিড়। গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা । মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। দীর্ঘ লাইনের কারণে কয়েকদিন অপেক্ষা করেও পণ্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক ক্রেতার। তাদের দাবি, বিক্রেতা বাড়ালে দুর্দশা কমবে দরিদ্র মানুষের।
গতকাল ১২ এপ্রিল (সোমবার) পৌর শহরের মোক্তারপাড়া, শহীদ মিনার, আরামবাগ, নাগড়া ও সাতপাই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টিসিবির চিনি, তেল ও মসুরের ডাল কিনতে ক্রেতার লম্বা লাইন। রোদের মধ্যেও কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতারা তেল, চিনি ও মসুরের ডালসহ বিভিন্ন দ্রব্য কিনছেন। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না পণ্য। যারা এই টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন না তাদের জন্য এটা শুধুই সময় ক্ষেপণ।
করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রেতাদের অধিকাংশ মুখে মাস্ক পরলেও সেভাবে সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি। প্রায়ই শরীরের সঙ্গে শরীর লাগিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনার অপেক্ষায় রয়েছেন শত শত মানুষ।
ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, টিসিবির ট্রাকে ৮১০ টাকায় প্যাকেজ পণ্য বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেজ পণ্যের মধ্যে দুই কেজি ডাল, দুই কেজি ছোলা, এক কেজি খেজুর, দুই কেজি চিনি ও চার লিটার তেল। প্যাকেজ ছাড়া আলাদাভাবে ডাল, চিনি কিংবা তেল বিক্রি হয় না।
জেলা সদরে মেসার্স এইচ আর খাঁন পাঠান সাকি, মের্সাস মঙ্গল চন্দ্র সাহা, মের্সাস সারোয়ার জাহান রঞ্জন, আটপাড়ায় মেসার্স শফিকুল ইসলাম খান, পূর্বধলায় মেসার্স লিটন স্টোর ও মেসার্স সাখাওয়াত হোসেন খাঁন, খালিয়াজুরীতে মেসার্স অমিত এন্টারপ্রাইজ, মদন উপজেলায় মেসার্স মৃণাল কান্তি সরকার, কেন্দুয়ায় মেসার্স বীনা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স সোনালী ট্রেডার্স, মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স, মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্স ও মেসার্স মিতালী বেকারী, দুর্গাপুরে মেসার্স হানিফ মিয়া স্টোর ও কলমাকান্দায় মেসার্স প্রাচার্য্য এন্টারপ্রাইজ টিসিবির পণ্য বিক্রি করছে।
শহরের মোক্তারপাড়া মাঠে টিসিবির ট্রাকের পণ্য কেনার জন্য অপেক্ষমাণ মাসুদ মিয়া বলেন, ‘রমজান মাস এসে গেছে। দোকানের চেয়ে কম দাম বলে কিনতে এসেছি।’
নাগড়া এলাকার ক্রেতা কবির মিয়া, মোক্তারপাড়া এলাকার সিরাজ উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, পণ্য কেনার জন্য লাইনে পুরুষ ও নারী দাঁড়িয়েছেন, তারা অনেকেই প্রকৃত ক্রেতা নন। অনেকেই সাধারণ পাড়া-মহল্লার ছোটখাটো দোকানির জন্য পণ্য কিনে নিয়ে যান। দোকানির কাছ থেকে কিছু টাকা লাভ পেয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে অপেক্ষাকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোক্তারপাড়া এলাকার টিসিবির ডিলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কে প্রকৃত ক্রেতা আর কে কার পক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন তা তারা যাচাই করেন না বা করতে পারবেনও না। লাইনে দাঁড়িয়ে যিনি প্যাকেজের ৮১০ টাকা দেবেন তাকেই তারা পণ্য দেবেন বলে জানান। তবে কয়েক দিন ধরে অনেক লম্বা লাইন হচ্ছে। হয় পণ্য বাড়াতে হবে নয়তো ডিলার বাড়াতে হবে।’
আরেক ডিলার এবিএম হাবিবুর রহমান বকুল বলেন, ‘প্রতিদিন চাহিদা বাড়ছে। শহরে আরও গাড়ি বাড়াতে হবে। প্রথম দিকে লোকজন লাইনে দাঁড়াতে লজ্জা পেত। এখন লোকজন বাড়ছে। তাই গাড়ি বাড়াতে হবে। নয়তো চাহিদা মতো লোকজনকে আমরা পণ্য দিতে পারি না। আর গোডাউন থেকে পণ্য সরবরাহ করতে একটা থেকে দেড়টা বেজে যায়। পরে আর চাহিদা মতো পণ্য বিক্রি করা যায় না।’
নেত্রকোণার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘নেত্রকোণা পৌর শহরের ছয় জন ডিলার রয়েছে। সদরসহ সারা জেলায় ১৭ জন ডিলারের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য দেয়া হচ্ছে। চাহিদা অনেক বেড়েছে। এ নিয়ে সোমবার মিটিং আছে। কী পরিমাণ পণ্য আছে খোঁজ খবর নিয়ে ডিলার বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’