রমজান ইবাদতের মাস। মুসলিম বিশ্বে রমজান মাসের চিত্র ভিন্ন রকম। যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে না তারা মসজিদে ভিড় করে তারাবি পড়ে। করোনার ভয়ে এবার তা হচ্ছেনা। আতংকিত মানূষ গৃহে বন্দি হয়ে পরেছে। ঈদের বাজার শুরু হয়ে যায় রমজানের প্রথম দিন থেকেই, সেই চিত্রটি বদলে গেছে। এখন উত্তর আমেরিকাতেও রমজান গুরত্ব সহকারেই বিবেচিত হয়। মুসলিম অভিবাসীদের আকর্ষন করতে বড় বড় দোকানগুলিতেও ঈদ স্পেশাল সেল দেয়। করোনার কারনে বদলে গেছে সব।
টেলিভিশনের বদৌলতে দুর থেকেও বাংলাদেশের চিত্র দেখি প্রতিদিন, বদলে গেছে রমজানের আমেজ। বদলায়নি শুধু দেশের মানুষগুলি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ” কাফনের কাপড় দিলেও মানুষ চুরি করে পাঞ্জাবি বানাবে”। একই ভাবে বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে বলেছিলেন ” অন্য দেশে সোনার খনি পায় আমি পেয়েছি চোরের খনি”। দুটি আক্ষেপ একই গুরত্ব বহন করে। অথচ মানূষ দেশপ্রেমিক হলে বাংলাদেশ আজ কোথায় চলে যেতে পারত। তিন মেয়াদে সরকার বাংলাদেশকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেছে এবং, কিভাবে বদলে দিয়েছে জেনেও মানূষ ভাবেনা। এখন দেশে ধনী মানূষের সংখ্যা কমনা। জাতীর এই দুর্যোগে বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে দেশের মানূষ নির্ভয়ে ঘরে থাকতে পারত। যারা চুরি করে তারা খাওয়ার জন্য চুরি করেনা, চুরি করা তাদের স্বভাব।
ক্ষমতার লোভও বদলায়নি দেশে। গনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে বিরোধী দল জরুরী দেশে, কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক ভাবে যোগ্য নেতৃত্ব অর্জন করতে পারেননি কেউ। শর্ট কাট পন্থায় ক্ষমতা যাওয়া রাজনীতির পথ নয়। জোর করে ক্ষমতা দখলও রাজনীতি নয়। রাজনীতি হতে হবে জনগন কেন্দ্রিক, সেই রাজনীতি কেউ করেনা এখন। জনগনকে সম্পৃক্ত করে রাজনীতি করার নেতাও এখন নেই দেশে। ২০০৯ সালের পরে রাজনৈতিক সক্ষমতা দেখিয়ে জনগনকে আকৃষ্ট করতে পারেনি কেউ। যুক্তিসংগত দাবী নিয়েও রাস্তায় নামেনি। ঘরে বসে নিত্য সমালোচনা করেই নেতার দায়িত্ব শেষ হয়না।
এখনো জাতীয় দুর্যোগে নেতারা বিবৃতি দিয়েই কর্তব্য বোঝাতে চাইছেন, বাস্তব কোন উদ্যোগ/ যুক্তি নিয়ে কথা বলেনি কেউ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একের পর এক উদ্যোগ গ্রহন করেছেন কোরোনা মোকাবেলায়। দুঃসময়ে মানূষের সাহায্যের উদ্যোগ গ্রহন করেছেন সংগতভাবে। সেই উদ্যোগে সংযুক্ত না হয়ে ভুল খুজে বেড়াচ্ছেন যারা তারা শুধু ক্ষমতা চান। ক্ষমতাই দেশপ্রেম না, তা নেতারা না বুঝলেও জনগণ এখন ভালোই বোঝে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মত সরকারের ব্যর্থ প্রমান করে জনগনকে উত্তেজিত করার রাজনীতি এখন অচল বাংলাদেশে।
প্রবাদ আছে ” বিপদেই বন্ধুর পরিচয়”। ভোটের সময় নেতারা ভোটারের কাছে দাবি করেন তারা জনগনের বন্ধু। মানূষ আজ বিপদে, নেতারা এগিয়ে এলে এটাই মোক্ষম সময় নিজেকে জনগনের বন্ধু প্রমান করার।চোর চুরি করবেই এটাই চোরের কাজ, কিন্তু চোরকে সহযোগিতা যারা করে তারাও চোর। তাদের খুজে বের করার দায়িত্ব এখন সবার, সরকার একা তা পারবেনা। স্থায়ীভাবে চুরি বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে সম্মিলিতভাবেই। দেশ বাঁচলে রাজনীতি বাঁচবে আর মানূষ বাঁচলে বাঁচবে নেতাও। এখনই সময় প্রমান করার কে কত বড় নেতা।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২৬ শে এপ্রিল ২০২০