মোঃ মোশফিকুর ইসলাম, নীলফামারী : নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় টি,আর ও কাবিখা প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম দূর্নীতি হয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করা হয়নি। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়েও কোন কোন প্রকল্পের সব টাকাই হয়েছে লুটপাট । অনেক প্রকল্প থাকলেও পায় নি প্রকল্পের কোনো অর্থ প্রকল্প সংস্লিষ্ট ব্যাক্তিরা। কেউ কেউ প্রকল্পের টাকা পেয়েছে অর্ধেক। আর কিছু কিছু প্রকল্প আছে কাগজে কিন্তু বাস্তবে নেই। প্রকল্পের সভাপতিরা ডিও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কবলে বরাদ্দের টাকা পাচ্ছে না ঠিকমত।
গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে সরকার মসজিদ, মন্দির, রাস্তা, স্কুল, হাসপাতাল, এতিম খানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টি আর ও কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে নগদ অর্থ ও খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়। তিনদিন ব্যাপী সরেজমিন ডোমারের বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখার সময় ব্যাপক অনিয়মের চিত্র ভেসে উঠে।
গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় ডোমারের বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের বটতলি মিস্ত্রি পাড়ায় গোদা রায়ের বাড়ীর নিকট কালি মন্দির সংস্কারের জন্য ৪৩,৫০০ টাকা বরাদ্দ পেলেও প্রকল্প সভাপতি গোদা রায় পায় মাত্র ১০ হাজার টাকা। গোদা রায় বলেন, আমাদের মন্দির সংস্কারের জন্য এলাকার মানিক রায় আমাকে পিআইও অফিসে নিয়ে গিয়ে সই দিয়ে ২০ হাজার টাকা দেয় ওই টাকার মধ্যে সে আবার ১০হাজার টাকা নেয় আমাকে দেয় ১০ হাজার টাকা। আমাকে দেওয়া ১০হাজার টাকা দিয়ে আবার সে নিজের বাড়ীর কাছে মন্দির সংস্কারে কাজে লাগায় আমাদের মন্দিরের কাজ করতে দেয় নি।
একই প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার সাবু রায়ের বাড়ীর নিকট কালি মন্দির ও হিরম্ব কুমারের বাড়ীর নিকট কালী মন্দির সংস্কারে ঘটেছে একই ঘটনা। সাবু রায়ের বাড়ীর নিকট কালি মন্দির সংস্কারের প্রকল্পের সভাপতি সাবু চন্দ্রের স্ত্রী শ্যামলী রায় বলেন, উপজেলায় ২০ হাজার টাকা দিছে তার মধ্যে ১০ হাজার টাকা পিআইও অফিসে নিছে আর ১০ হাজার টাকা আমার স্বামীকে দিছে।
ওই এলাকার মানিক এর বাড়ীর নিকট কালী মন্দির সংস্কারের জন্য ৪৩,৫০০ টাকা বরাদ্দ হলেও ওই এলাকার কবিতা রাণী ও রাম প্রসাত রায় জানান আমরা সরকার থেকে মন্দিরের জন্য কোনো টাকা পাই নি।
টি,আর নগদ অর্থ প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকার বটতলি বুড়ার ডাঙ্গা জামে মসজিদ সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ৭৯হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। কিন্তু ওই মসজিদের নামায আদায়কারী নুর ইসলাম, ঝুমর আলী জানেন বরাদ্দ পেয়েছে ২০হাজার টাকা। কিন্তু এবিষয়ে ওই মসজিদের কোষাধ্যক্ষ স্বপন বলেন, বরাদ্দের টাকা দিয়েছে ৯হাজার আর এক হাজার টাকা খরচ মোট ১০হাজার টাকা বরাদ্দ। প্রকল্পের সভাপতি মানিক ইসলাম মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান ভিন্ন কথা তিনি বলেন,মসজিদের বরাদ্দ পেয়েছি ৪০ হাজার টাকা।
ওই এলাকার বটতলি জামে মসজিদ সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৩,৫০০ টাকা কিন্তু ওই মসজিদের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, মসজিদ সংস্কারের জন্য আমরা সরকার থেকে কোনো টাকা পাই নি।
সোনারায় ইউনিয়নের বড়াগাছা লাইন পাড়া সার্বজনিন হরিমরিন্দর সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পেলেও মন্দিরের সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায় জানান, আমার মন্দিরের কাজের জন্য সরকার থেকে কোনো টাকা পাই নি, মন্দির জরাজৃর্ন অবস্থায় পড়ে আছে তাই আমরা টাকার অভাবে কোনো কাজ করতে পারি নি। পূর্ব মেলা পাঙ্গা ফোরকানিয়া মাদরাসা সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ৮৭হাজার টাকা বরাদ্দ হলেও সারেজমিনে এই নামে কোনো প্রকল্প খুজে পাওয়া যায় নি। এছাড়া হরিণচড়া ইউনিয়নে ৯নং খাটুরিয়া উত্তর পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা সংস্কারের জন্য ৪৩ হাজার ৫০০টাকা বরাদ্দ হলেও হরিণচড়া ইউনিয়নের সচিব এ বিষয়ে প্রত্যয়ন দেয় যে এই নামে কোনো মন্দির বা প্রকল্প নেই।
শুধুমাত্র টি আর প্রকল্পে নয় একই অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পে আটিয়াবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাট ও সংস্কার হয়েছে নামমাত্র অভিযোগ এলাকাবাসীর। মাঠে মাটি ভরাট করার কথা ৫০ টলি থাকলেও মাটি ভরাট হয়েছে ১২ টলি। এ বিষয়ে প্রকল্প সভাপতি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হেয়াতুল আলম জানান, পিআইও অফিসে আমাদের তো গম দেয় নি। পিআইও অফিস আমাকে ডিও ব্যবসায়ী মশিয়ার ও সফিয়ার কে দেখাই দেয়। তারা আমাকে টন প্রতি ১৭ হাজার করে ১০টনে মোট ১লক্ষ ১৭ হাজার টাকা দেয়। তার মধ্যে পিআইও অফিসে খরচ বাবদ নেয় ২৩ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে ডোমার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জিয়া কোনো মন্তব্য করে নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, কাজ না করার কোনো সুযোগ নেই। এরকম কোনো কাজের কোনো ব্যাঘাত ঘটলে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।