রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকার সাতমসজিদ রোডে দৃষ্টিনন্দন ও অভিজাত স্থাপনার মধ্যে একটি হচ্ছে গাউসিয়া টুইন পিক। প্রখ্যাত স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশের প্রতিষ্ঠান ভিসতারা আর্কিটেক্টস এই স্থাপনার ডিজাইন করেছে। তবে এই ভবনটিতে সাধারণ মানুষকে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন খোদ স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ নিজেই।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বেইলি রোডের কোজি গ্রিন কটেজ নামের একটি বহুতল ভবনে আগুনের ঘটনার পরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ আহবান জানান তিনি।
মুস্তফা খালিদ পলাশ স্ট্যাটাসে লিখেন, “প্রতিনিয়ত এই ভবনটি নিয়ে সত্যি উৎকণ্ঠায় থাকি। নক্সা এবং অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিক ভাবে একে সমূহ অগ্নীঝুকিপূর্ণ রেস্তোরা ভবনে রুপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য রিপোর্ট স্বাক্ষর করার তার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা।যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু করে দেয়া হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রইং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক, ডেভেলপারকে বারংবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসু অগ্রগতি হয়নি। অর্থগৃধ্নুতার কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে। ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্বভ সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদেরকে এও জানানো হয় যে সঠিক ব্যবস্থা না গ্রহণ করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।
উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গতমাসে অত্র এলাকার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশনমাস্টারকে এক বার্তায় এবিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ট ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি তার সাধ্যমত তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশনমাস্টার সাহেবকে সকাল বিস্তারিত তথ্য সমেত লিখলাম। দেখা যাক কি হয়।
যতদূর জানি এভবনের অগ্নীনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে ইত্যাদি। প্রিয় লাভলু, তোমার লেখার পিঠেই কথাগুলো লিখলাম কারণ একজন সচেতন স্থপতি তো বটেই একজন শহরবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই দ্বায়ীত্ব দৃশ্যমান অশনিসংকেতের মোকাবেলা করা।”
বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের কোজি গ্রিন কটেজ ভবনের বিভিন্ন তলায় ছিলো একাধিক রেস্টুরেন্ট। কোনোপ্রকার ফায়ার সেফটি তো সেখানে ছিলই না, উপরন্তু একটিমাত্র সিড়িতেও রাখা ছিল সারি সারি গ্যাস সিলিন্ডার। ফলে আগুন লাগার পর তা গ্যাসের সংস্পর্শে এসে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে ও দ্রুত উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন আরও অনেকে।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম