স্পোর্টস ডেস্কঃ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে প্রথমবার হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলার বাঘেরা। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়ল সাদা পোশাকে রঙিন মুমিনুল হকের দল। সকালের রক্তিম সূর্য উকি দেওয়ার আগেই যে রঙ ছড়িয়ে পড়ল বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এ জয়টি যে বড্ড বেশি প্রয়োজন ছিল দেশের ক্রিকেটের জন্য। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন, উপমহাদেশের বড় বড় দলগুলো যেখানে নাকানি-চুবানি খায়। সেখানে ইতিহাস গড়ে জিতলো বাংলার দামাল ছেলেরা।
এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৯টি টেস্টসহ তিন ফরম্যাটে মোট ৩৩ ম্যাচ খেলে একটি জয় না পাওয়া বাংলাদেশ অবশেষে জয়ের দেখা পেয়েছে। মাউন্ট মুঙ্গানুইয়ের বে ওভালে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কিউইদের ৮ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকার পর হারের মুখ দেখলো কিউইরা। এই জয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও পেলো প্রথম পয়েন্টের দেখা।
এই টেস্টের প্রথম থেকেই ব্যাটে-বলে কিউইদের শাসন করেছে বাংলাদেশ। বে ওভালে টস জিতে স্বাগতিকদের ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানান টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল হক। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় কিউইরা। তবে ডেভন কনওয়ের ১২২, হেনরি নিকলসের ৭৫ ও উইল ইয়ংয়ের ৫২ রানে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান তোলে স্বাগতিকরা। ৩টি করে উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী মিরাজ। ২ উইকেট নেন মুমিনুল হক আর ১টি উইকেট নেন এবাদত হোসেন।
কিউইদের ৩২৮ রানের জবানে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করে ৪৫৮ রান। মুমিনুল হকের ৮৮, লিটন দাসের ৮৬, মাহমুদুল হাসানের ৭৮ ও নাজমুল হোসেন করেন ৬৪রান। কিউই বোলারদের সামলে ১৩০ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নেন ট্রেন্ট বোল্ট, ৩ উইকেট নেন নিল ওয়াগনার।
১৩০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা কিউই ব্যাটাররা চতুর্থ দিনেই খেই হারায় এবাদত, তাসকিনদের গতি আর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কাছে। চতুর্থ দিনের শেষ সেশনেই হারিয়ে ফেলে পাঁচ উইকেট। তবে রস টেলর ও উইল ইয়াং ৭৩ রানের জুটি গড়ে এগিয়ে নেন দলকে। ৫৪ ওভারে দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় এবাদতের বলে ইয়াং ৬৯ রান করে ফেরার এক বল পরেই শূন্য রানে ফেরেন হ্যানরি নিকলস।
৫৬ ওভারের তৃতীয় বলে আবারও আঘাত এবাদতের টম ব্লান্ডেলকে ফেরান (শূন্য রানে) ১৩৬ রানের মাথায়। তাতে নিউজিল্যান্ডের দিন শেষ হয় ১৪৭ রানে ১৭ রানের লিড নিয়ে। কিউইদের একমাত্র ভরসা রস টেইলরকে পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় ওভারেই ৪০ রানে ফেরান এবাদত। টেইলরকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট নেন এবাদত। এ ছাড়া ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পেসার রবিউল ইসলামের ৫ উইকেট নেওয়ার পর বাংলাদেশি কোনো পেসারের পাঁচ উইকেট পাওয়ার রেকর্ডও এটি।
টেইলরের বিদায়ের পর মাত্র ২২ রান যোগ করতেই সব উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে শেষ হয় কিউইদের ইনিংস। এতে ৩৯ রানের লিড পায় স্বাগতিকরা। এবাদত নেন ৬ উইকেট, তাসকিন ৩টি ও মেহেদী মিরাজ নেন ১টি উইকেট।
মামুলি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে টিম সাউদির করা ইনিংসের দ্বিতিয় ওভারে সাদমান ইসলাম বিদায় নেন ৩ রানে। এরপর ৩১ রানের জুটি গড়ে কাইল জেমিনসনের বলে ক্যাচ দিয়ে ১৭ রানে ফেরেন নাজমুল হোসেন। বাকিটুকু পথ পাড়ি দেন মুমিনুল-মুশফিক। মুমিনুলের ব্যাটে আসে ১৩, মুশফিক করেন ৫ রান। টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে চার দিন দাপট দেখিয়ে পাওয়া এই জয় নিঃসন্দেহে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য।
এদিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্রিকেট দলের সব সদস্যসহ টিম ম্যানেজমেন্টকে আলাদা বার্তায় আজ বুধবার (৫ জানুয়ারি) অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৮ ।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৫৮ ।
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৪৭/৫) ৭৩.৪ ওভারে ১৬৯ (টেইলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়্যাগনার ০*, বোল্ট ৯*: তাসকিন ১৪-৩-৩৬-৩, শরিফুল ১২-২-৩০-০, মিরাজ ২২-৫-৪৩-০, ইবাদত ২১-৬-৪৬-৬, মুমিনুল ৪-০-৭-০) ।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০) ১৬.৫ ওভারে ৪২/২ (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*; বোল্ট ৫-৩-৪-০, সাউদি ৫-২-২১-১, জেমিসন ৩.৫-১-১২-১, ওয়্যাগনার ৩-১-৪-০) ।
ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: এবাদত হোসেন চৌধুরি।