প্রশ্ন: এই সমস্যা কেন হয়?
উত্তর: ৯২-৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এর কারণ অজানা। তবে অনেক সময়ে বিভিন্ন রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। সেই সব রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে রক্তচাপও ঠিক থাকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জিনগত কিংবা অভ্যাসগত কারণ এই সমস্যা তৈরি করে। কারও পরিবারে হয়তো বংশপরম্পরায় উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তা অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারাও বহন করে। আবার কেউ স্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে জাঙ্ক ফুড খান। কিংবা হাঁটাচলা কম করেন, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা টেলিভিশনের সামনে বসে থাকেন, দুশ্চিন্তা করেন। তাঁদেরও এই সমস্যা হয়। পাশাপাশি অল্প পরিমাণ মদ খেলেই পুরুষদের রক্তচাপ বাড়ে। যদিও মহিলাদের নিয়মিত দুই-তিন পেগ খেলে তবেই রক্তচাপ বাড়ার ঝুঁকি থাকে।
উত্তর: উচ্চ রক্তচাপ নিঃশব্দে মৃত্যু ডেকে আনে। যেমন, টাইটানিক জাহাজের সামনে হিমশৈল অল্প ভাসতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু বিরাট সেই হিমশৈলের জলের নীচে থাকা অংশের সঙ্গে ধাক্কাতেই ডুবে গিয়েছিল জাহাজটি। তেমনই উচ্চ রক্তচাপও গোপনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে, বিশেষ ভাবে কিডনি, চোখ, মস্তিষ্ক, হৃদ্যন্ত্রের। আসলে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, নির্মূল হয় না।
উত্তর: অনেক সময় এটা জন্মগত কারণ। দেড় কেজির নীচের ওজনের শিশু জন্মালে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা তৈরির আশঙ্কা বেশি। আবার কারও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা জন্ম থেকে কিডনির আকার ছোট, তাদেরও সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি কমবয়সি ছেলেমেয়েদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণও রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
প্রশ্ন: কোন বয়স থেকে রক্তচাপ নিয়মিত মাপা উচিত?
প্রশ্ন: উচ্চ রক্তচাপ হৃদ্যন্ত্রের উপরে কতটা প্রভাব ফেলে?
উত্তর: হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে কিংবা শিরা ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ, হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ধমনী ফুলে গিয়ে তা চিরে যেতে পারে। কারও হয়তো তেমন কোনও রোগের উপসর্গ ছিল না। আচমকাই দেখা গেল, তাঁকে ব্রেন স্ট্রোক, নাক দিয়ে রক্তপাত কিংবা লেফ্ট ভেন্ট্রিকুলার ফেলিওর নিয়ে ভর্তি হতে হচ্ছে।
প্রশ্ন: মুক্তির উপায় কী?
উত্তর: প্রতিদিন শারীরচর্চা করতে হবে। জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস বদলাতে হবে। প্রত্যেককেই ‘ড্যাশ ডায়েট’ (ডায়েট অ্যাপ্রোচ টু স্টপ হাইপারটেনশন) মেনে চলতে হবে। দিনের অন্তত পাঁচ বার শাক ও বিভিন্ন আনাজ এবং ফল খেতে হবে। কারণ ফলে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে। এক জন মানুষের সারা দিনে ১৫ গ্রাম তেল খাওয়া উচিত। নুন ছ’গ্রামের কম ও সরাসরি সোডিয়াম তিন গ্রামের কম খেতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপান পুরো বন্ধ করতে হবে।
প্রশ্ন: কী কী সাবধানতা নিতে হবে?
উত্তর: সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারত হৃদ্রোগে আক্রান্তের রাজধানী হয়ে উঠবে। এর জন্য শিশুর জন্ম থেকেই তার প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। টিভির সামনে বা মোবাইল হাতে দিয়ে বসিয়ে তাকে জবুথবু করে না রেখে খেলাধুলো করতে দিন। জাঙ্ক ফুড একদম দেওয়া যাবে না। আর সকলকেই ঘাম ঝরিয়ে দিনে অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটতে হবে। ১৮ বছরের পর থেকে প্রত্যেককে বছরে এক বার রক্তের কোলেস্টেরল ও সুগার পরীক্ষা করতে হবে।
প্রশ্ন: তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও কি হৃদ্রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে?
উত্তর: ৪০-৪৫ বছরের নীচের হার্ট অ্যাটাককে বলা হয় ‘ইয়ং মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’। সারা বিশ্বের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৯০-৯৫ শতাংশ তরুণ প্রজন্ম হৃদ্রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ধূমপানের কারণে। আর ৭০-৮০ শতাংশের কারণ বিরিয়ানি, তেলেভাজা ও মদ খাওয়া। ৪০ বছরের নীচে হৃদ্রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বছরে ৩০ শতাংশ।