প্রদীপ কুমার দেবনাথ, নাসিরনগর ( ব্রাহ্মণবাড়িয়া)।। বর্তমান বিশ্বে করোনা ভাইরাস এক মহা-আতঙ্কের নাম। সারাবিশ্বে প্রচন্ড দাপটে প্রায় ২০০ টিরও বেশী দেশে এর ভয়াবহ ছোবলের মাধ্যমে হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। চরমভাবে আক্রান্ত বিশ্বের অনেক দেশে সচেতনতা ও নিয়ম-নীতি পালনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েও মৃতের হার ৩% বা ৪%।
অপরদিকে বাংলাদেশ মাত্র প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করছে এবং অল্প আক্রান্ত হয়েও মৃতের হার ১৫.৭৮% যা বিশ্বের সকল দেশের চেয়ে বেশি। এর পিছনে প্রধান কারণ জনগণের অসচেতনতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি, অজ্ঞতা, উগ্রতা। বাংলাদেশ সরকার করোনায় আক্রান্তের অনেক আগে থেকেই সচেতনতা তৈরি, তৃণমূল পর্যায়ে এর ভয়াবহতা প্রচার ও বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন বাঙ্গালি জাতি সরকারি এসব প্রচারণা ও পদক্ষেপ গুলো আমলে নেয়নি।
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জে একে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চলছে প্রচুর গণজমায়েত। যেখানে একজন লোকেরও বাইরে ঘোরাফেরা করার কথা নয় সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় গ্রামে হাঁটে – মাঠে – ঘাটে উৎসব আমেজে চলছে ব্যবসা বানিজ্য, রাস্তাঘাটে তরুণ তরুণী, যুবক যবতী, মধ্যবয়সী পুরুষ মহিলা, বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের মিলনমেলা চলছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচেতন জনতার শত প্রচেষ্টা সত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না এ মিলনমেলা। জনৈক ব্যক্তি যিনি আরও তিনজনের সাথে খোশগল্প করতে করতে করোনা ভাইরাসের গোষ্ঠী উদ্ধার করে যাচ্ছিলেন তাকে থামিয়ে প্রশ্ন করা হলে তার জবাব ছিল এইসব করোনা ফরোনা নাকি সরকারের চাল।
সরকার নাকি মানুষকে ঘরে বসিয়ে দেশটাকে কার হাতে তুলে দিচ্ছে। অন্যরাও তার কথায় সায় দিয়ে প্রশ্নকারীকে তীর্যক চাহনিতে ঠাট্টা করে হাসতে হাসতে স্থান ত্যাগ করলেন। তারপর স্থানীয় বাজারে ঢুকে দেখা গেল অর্ধেকেরও বেশি দোকান সাটার বন্ধ থাকলেও বিশেষ দরজা খুলে দিয়ে কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করছে। আর সকালে নদীর পাড়ে কাঁচা বাজার তো রমরমা ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যদিও কাঁচা বাজার সব ধরনের অস্থায়ী দোকানপাটের বিশাল সমাহার সেখানে। আর ক্রেতার সংখ্যাও রেকর্ড পরিমাণ। তবে সচেতন লোকজন এ ব্যাপারে মারাত্মকভাবে উদ্ধিগ্ন। তাদের কয়েকজনের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলে দেখা যায় তারা সবাই এর প্রতিকার চান।
মুঠোফোনে বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল আহাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি, তার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যবৃন্দসহ সচেতন মহলকে নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন করোনার ভয়াবহতার বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন করার চেষ্টা চলছে।
ইতিমধ্যে অনেকে সচেতন হয়েছেন। তবে সকলেই প্রশাসনের কঠিন ভূমিকা আশা করছেন। আসার সময় দেখা যায় রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানগুলো মিনি মার্কেট। খেলার মাঠে বিশাল জটলা। এ অবস্থার প্রতিকার না হলে নাসিরনগর সহ পাশ্ববর্তী এলাকায় করোনার মহামারী লেগে যাবে নিশ্চিত।