আজ ১৩ নভেম্বর নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামের নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ছিলেন নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি ও গীতিকার।
বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজ। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, আর মা গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। হুমায়ূন আহমেদের ডাকনাম কাজল। তার অন্য দুই ভাইও বরেণ্য ও প্রতিভাবান। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।
নেত্রকোনার এই সন্তানটি লেখার জাদুতে যেমন আলোড়ন তুলেছেন, তেমনি সৃজনশীলতার সব শাখাতেই পাঠক ও দর্শকদের নিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের এই অধ্যাপক ‘নন্দিত নরকে’ এবং ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশা নামদার’সহ দুই শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন। তার বইয়ের সংখ্যা তিনশ’রও বেশি। তার রচিত ‘হিমু’, ‘শুভ্র’, ‘মিসির আলি’র মতো অনবদ্য চরিত্র। আশির দশক থেকে শুরু করে তার নির্মিত ‘বহুব্রীহি’, ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো নাটকগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছেও এখনো একইভাবে জনপ্রিয়।
‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, সর্বশেষ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
তিনি আমাদের ছেড়ে যান ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্রে যাবার পর সেখানেই তিনি মারা যান। মাত্র ৬৪ বছর বয়সেই তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। সেখান থেকে মরদেহ ঢাকায় আনার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে লাখো মানুষের অশ্রু পুষ্পতে সিক্ত হন তিনি। ২৪ জুলাই নুহাশপল্লীর লিচুতলায় চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সেদিন গভীর শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল তার লাখো ভক্ত অনুরাগী। হুমায়ূন আজো বেঁচে আছেন লক্ষ পাঠকের হৃদয়ে হৃদয়ে।
এদিকে বাংলা সাহিত্যের অমর লেখক হুমায়ূন আহমেদের ৭৬তম জন্মদিন আজ তার নিজের হাতে গড়ে তোলা সবুজ প্রকৃতি ঘেরা নুহাশ পল্লীতে উদযাপিত হয়েছে। গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত এই নুহাশ পল্লীতে ১৩ নভেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে লেখকের পরিবার ও প্রিয়জনেরা ১ হাজার ৭৬টি মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে শুরু করেন এই শুভক্ষণের আনুষ্ঠানিকতা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজারো ভক্তের জন্য এই আয়োজন হয়ে উঠেছিল এক বিশেষ মেলবন্ধনের স্থান। বুধবার দুপুরে নুহাশ পল্লীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেখকের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং তার দুই পুত্র নিশাত ও নিনিত।
আজ ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | বিকাল ৩:৫১ | বৃহস্পতিবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি