কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কতিপয় দূর্নীতি পরায়ন কর্মচারীদের যোগসাজশে একটি চক্র নির্বিচারে জাল দলিল, খারিজ, খাজনার চেকসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ক্ষতি করছে অন্যদিকে সাধারন মানুষের জমিজমা জবর দখল করে আসছে।
অতি সম্প্রতি এমনি একটি ঘটনা প্রকাশ পেলে এসব জাল জালিযাতির তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। এ ঘটনা প্রকাশিত হলে নওগাঁ সাব-রেজিষ্ট্রার গৃহিত ব্যবস্থা স্বরুপ কেবলমাত্র ৭ জন নকলনবিশকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন। নওগাঁ শহরের কোমাইগাড়ি মহল্লার জনৈক আজগর আলীর পুত্র সোহেল রানা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর দাখিলকৃত একটি আবেদনের সূত্র ধরে এসব তখ্য জানা গেছে। জানা গেছে, উক্ত ৮৩৫১ তারিখ ০৩-০৭-১৯৮৩ মোতাবেক কোমাইগাড়ি মৌজার উক্ত সম্পদিত্ত কাজী মোজাফ্ফর হোসেনের পুত্র কাজী চৌধুরী মোতাহার হোসেন, কাজী মোশারফ হোসেন ও কাজী মোহাম্মদ হোসেন, কাজী
শাহাদত উল্লাহর পুত্র কাজী শাহাজাহান হোসেন, কাজী সাজেদুর রহমান, কাজী শাহ মাহমুদ, কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন ও কাজী শহিদুর রহমান খলিসাকুড়ি মহল্লার তাছের উদ্দিন মন্ডলের পুত্র এ কে এম আজাদ হোসেনের বরাবর কবলা রেজিষ্ট্রি করে দেন। সেই থেকে উক্ত ক্রেতাদের স্বত্ত্ব দখলে থাকে ঐ সম্পত্তি।
সম্প্রতি কোমাইগাড়ি দেওয়ান পাড়া নিবাসী আজগর আলীর পুত্র সোহেল রানা উক্ত সম্পত্তির ৮৩৫১/১৯৮৩ নম্বরের দলিলের জাবেদতা নকল উত্তোলন করেন। নকল উত্তোলন করে দেখতে পান যে মুল দলিলের সাথে জাবেদা নকলের কোন মিল নাই। দাতা গ্রহিতা সম্পূর্নভাবে পরিবর্তন করে দলিলের ভিতরে দাতা গ্রহিতার নাম পরিবর্তন করে তফশীল সংযোজন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে সাব-রেজিষ্টি অফিসে অভিযোগ করেন তিনি।
পরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে ১৯৮৩ সালে ১৬৩ নম্বর ভলিউম বইয়ের ঐ পাতাগুলো পুরোপুরি বদলে ফেলা হয়েছে। এ ছাড়াও দলিল বাংলা অথবা ইংরাজী যে কোন একটি মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু ঐ দলিলটি একইসাথে বাংলা এবং ইংরাজী উভয় মাধ্যমে সম্পাদিত হয়েছে।
এ বিষয়টি নিয়ে নওগাঁ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে তোলপাড় শুরু হয়। শুরু হয় তদন্ত । এই পুরো কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত নকল নবিশ শামিমা সিদ্দিকা, নকল নবিশ আবুল কালাম আজাদ, নকল নবিশ জুলকার ফাইন, নকলনবিশ মোঃ রাশেদুল ইসলাম, নকল তুলনাকারী মোঃ রাশেদুল ইসলাম রাজু ও মৌসুমী আকতার নকল পাঠক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ব্যপারে নওগাঁ সদর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার মোঃ রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন সারাদিন যত দলিল, জাবেদা নকলসহ প্রচুর কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়। এত কিছু দেখার পরিস্থিতি থাকেনা। শুধু সরকারী রাজস্ব জমা হয়েছে কিনা এবং রেকর্ড কিপার এবং সহকারী রেকর্ডকিপারের স্বাক্ষর আজে কিনা তা দেখে তিনি স্বাক্ষর করেন। এ ক্ষেত্রে সঠিকতা যাচাই করেই তিনি স্বাক্ষর করেছেন।
এই প্রক্রিয়ার সাথে অফিস সহকারী, সহকারী রেকর্ড কিপার এবং রেকর্ড কিপার জড়িত থাকেলও তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে কেবলমাত্র নকল নবিশদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।