কামাল উদ্দিন টগর, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় সদর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিনব কায়দায় গ্রেফতার বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। পৃথক পৃথক অভিযানে আটককৃত আসামীদের নিকট হতে পাওয়া নগদ টাকা ও মাদকের পরিমান এজাহারে কম দেখিয়ে উদ্ধারকৃত টাকা আত্নসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৪ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ৮ টার দিকে মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নওগাঁ সদর উপজেলার কুশাডাঙ্গা গ্রামের কামাল হোসেনের স্ত্রী বিউটি আক্তার (৪৫) কে আটক করে। এক নারী কস্টেবলকে সঙ্গে নিয়ে চার পুলিশ কর্মকর্তা এ অভিযান পরিচালনা করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন এস আই মাহফুজার রহমান, এস আই আব্দুল মান্নান, এস আই সাইফুল ও এস আই আব্দুল মজিদ। অভিযানে মাদক ব্যাবসায়ী বিউটি আক্তারের বাড়ি তল্লাশি করে ২০ কেজি পানি ধারনের সাইজের দুই পাতিল ও একটি প্লাস্টিকের জারকিন ভর্তি চোলাইমদ সহ বিছানার নিচে হতে ৪০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
পরে পাতিলে রাখা চোলাই মদ বাড়ির বাহিরে ঢেলে ফেলে দিয়ে প্লাস্টিকের জারকিন ভর্তি চোলাই মদসহ ৪০ হাজার টাকা ও আসামীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। কিন্তু এজাহারে মাত্র ৫ লিটার চোলাই মদ দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও জব্দ তালিকায় ৪০ হাজার টাকার কোন উল্লেখ নেই। এজাহারে উদ্ধারকৃত মদের পরিমান কম দেখিয়ে জব্দকৃত ৪০ হাজার টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
এছাড়া গত ৭ জুন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় আরজি নওগাঁ লাটপাড়া মোড়ে স্টার মায়া গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে ২১ জন জুয়ারীকে আটক করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ওসি তদন্ত রাজিবুল ইসলাম, ওসি অপারেশন মোঃ আব্দুল গফুর, এস,আই নাজমুল হোসেন, এস,আই হানিফ, এস,আই কৃষ্ণ, এস,আই হুমায়ুন। এসময় জুয়ার বোর্ড থেকে ২১ জন জুয়ারীদের নিকটে থাকা ২ লক্ষাধিক টাকা জব্দ করা হয়। কিন্তু মামলায় মাত্র ১৪,৮৩৯ টাকা জব্দ দেখিয়ে বাকি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ উঠেছে।
চোলাই মদসহ আটককৃত বিউটি আক্তারের মেয়ে ফাল্গুনী আক্তার বলেন, ঈদের পর ছোট বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ৪০ হাজার টাকা বুর্যো বাংলাদেশ এনজিও থেকে লোন নিয়ে ঘরে বিছানার নিচে রেখেছিলাম। তল্লাশির সময় এস আই মাহফুজার ওই টাকা নিয়ে নেয়। ফেরত দেওয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু টাকা ফেরত দেয়নি। আর এস আই মান্নান মাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করেন।
প্রতিবেশী লিপি আকতার বলেন, পুলিশ বাড়িতে তল্লাশী করে ২০/২৫ কেজি পানি ধারনের দুই পাতিল ও এক কন্টেনার চোলাই মদ বের করে বাহিরে আনে। পরে পাতিলেরগুলো মাটিতে ঢেলে ফেলে দেওয়া হয় এবং কন্টেনার সঙ্গে নিয়ে যান।
অভিযুক্ত এস,আই মাহফুজার রহমান বলেন, শুক্রবারে কুশাডাঙ্গা গ্রামে মাদক ব্যবসায়ী বিউটী বেগমকে ৫ লিটার চোলাই মদসহ আটক করা হয় সেখানে কোন টাকা উদ্ধার হয়নি।
এস,আই আব্দুল মান্নান বলেন, বিউটীর বাড়ী থেকে টাকা নেওয়ার দাবী সঠিক নয়। আসামীকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি জন্য আমাদের বিরুদ্ধে এসব গুজব রটাচ্ছে।
শহরের লাটাপাড়া মহল্লায় জুয়া বোর্ডে পুলিশের অভিযানের প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে আটকের পর তাঁদের কাছে থাকা জুয়া খেলার প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা জব্দ করা হয়। এরপর প্রায় ১ ঘন্টা তাঁদেরকে ওই গ্যারেজের ভেতর আটক করে রাখা হয়। ওই সময় পুলিশ বাহিরে এসে স্থানীয়দের কাছে সাক্ষী হবার জন্য অনুরোধ করে। কয়েকজনকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে সাক্ষী বানিয়ে স্বাক্ষর নেয়া হয়। তবে কত টাকা জব্দ করেছে তার কোন পরিমান সাক্ষীদের দেখানো হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আটক জুয়ারীদের একজন বলেন, জুয়াবোর্ডে পুলিশ এসে প্রথমেই আমাদের যার কাছে যত টাকা ছিলো তার সম্পূর্ণ জমা নিয়েছে। মারধরও করা হয়েছে আমাদের। আমার নিজেরই পাঁচ হাজার টাকা ছিলো। বোর্ড থেকে দুই লক্ষ টাকারও বেশি জব্দ করা হয়েছে। অথচ আমাদের আদালতে পাঠানোর পর জানলাম তাঁরা মাত্র ১৪ হাজার ৮৩৯ টাকা জব্দ দেখিয়েছে। এটা অভিযানের নামে পুলিশদের পকেট ভর্তির কৌশল ছাড়া আর কিছুই না।
জুয়ার মামলার বাদী এস,আই হুমায়ুন কবির বলেন, ৭ জুন আরজী নওগাঁয় অভিযানের সময় ওসি তদন্তস্যারসহ ৭/৮ জন অফিসার উপস্থিত ছিলাম। আমাদের সামনে পাবলিক স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে টাকা গণনা করে জব্দ তালিকা করা হয়েছে। এখানে টাকা আত্নসাতের কথা সঠিক নয়।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কল রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মাদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বলেন, এই দুটি ঘটনার মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবো। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে পুলিশ সুপার মহোদয়ের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।