মাহমুদুল হাসান শাওন:: দেবহাটাতে দখলদার চক্রের জবর দখল এবং নেট-পাটায় জর্জরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার সরকারী খাল গুলো। এতে করে একদিকে প্রতিনিয়ত চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, আর অন্য দিকে পানির প্রবাহ না থাকায় তলদেশ ভরাট হওয়ার সাথে সাথে নব্যতা হারিয়ে গতিহীন হয়ে পড়ছে খাল গুলো। তাছাড়া পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ায় বর্ষার মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই উপজেলার নিন্মাঞ্চল গুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির কারনে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে স্ব স্ব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সাধারন মানুষ । সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কতৃক সকল সরকারী খালের ইজারা বাতিল সহ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তথা খাল গুলোর পানি প্রবাহের ধারা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন স্থানে অবৈধ নেট-পাটা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হলেও দেবহাটার খাল গুলো এখনও রয়ে গেছে অবৈধ দখলদার আর নেট-পাটার কবলে। কোথাও আবার ইজারার নামে খালের মুখে মাটির বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে প্রভাবশালীরা। বছরের পর বছর ইজারাদার চক্রের স্বেচ্ছাচারিতা, জবর দখলকারীদের খাল দখল প্রবনতা ও খালে অজ¯্র নেট-পাটা বসিয়ে সম্পুর্ন ব্যাক্তি স্বার্থে অবৈধভাবে মাছ চাষ করা হলেও তাদেরকে উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বর্তমানে নব্যতা হারিয়ে অনেকটা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেবহাটার খাল গুলো। সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়ন সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন লাবণ্যবতী খালের ওপরেই নির্ভরশীল। যুগ যুগ ধরে লাবণ্যবতী খালের মাধ্যমে বহু এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়ে আসছে ইছামতি নদীতে। লাবন্যবতী খালটি হাড়দ্দাহ স্লুইজ গেইট থেকে ইছামতি নদীর সাথে সংযুক্ত। আবার সাতক্ষীরার প্রানসায়ের ও কলকাতা খাল থেকে শাখা খাল হিসেবে চরবালিথা খাল, কদমখালী খাল, ঝিনুকঘাটা খাল এসে মিশেছে লাবন্যবতীতে। আবার কুলিয়া বাধের মুখ থেকে লাবণ্যবতীর দুটি শাখা কামটপাড়া সুবর্নাবাদ ও শশাডাঙ্গা হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পাশ্ববর্তী এলাকা গুলোতে। লাবন্যবতী খালের কামটপাড়া এলাকার খালটির একটি শাখা মুখ ইজারার নামে মাটির বেড়ীবাধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে ঘেরে পরিনত করেছে স্থানীয় ময়নুদ্দীনের ছেলে ইব্রাহিম। আর লাবণ্যবতীর অন্যান্য শাখা খাল গুলোর মধ্যে সুবর্নাবাদ, টিকেট, পুটিমারী হয়ে প্রবাহিত খালের কয়েক মিটার অন্তর শত শত অবৈধ নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষের নামে খালের পানি প্রবাহ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ করে চলেছে এলাকাগুলোর শতাধিক প্রভাবশালী, সুবিধাবাদীরা। দেবহাটার পারুলিয়া সখিপুরের পানি নিষ্কাশনের সাপমারা খালেও দুই পাশের জমি জবরদখল ও ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মান সহ ময়লা-আবর্জনার স্তুপের কারনে অনেকটাই নব্যতা হারিয়ে ক্রমশ মরা খালে পরিনত হচ্ছে। ফলে এসব এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহের ধারা গতিহীন হয়ে পড়েছে। ইতোপুর্বে সাপমারা খালটি থেকে বেশ কয়েকটি শাখা হলদারখালী, চেংমারী, মাঝেরহাটি হয়ে প্রবাহিত হলেও বর্তমানে অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে খালগুলো মৎস্য ঘেরে পরিনত হয়েছে। এসব এলাকার দখলদাররা খাল বন্ধ করে ছোট ছোট মৎস্য ঘের হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে। অপরদিকে দেবহাটার চরশ্রীপুর ইছামতি নদী থেকে সদর ইউনিয়নের গোপাখালী হয়ে সখিপুর ইউনিয়নের কেওড়াতলার মধ্য দিয়ে তিরকুড়া পর্যন্ত প্রবাহিত মতিঝিল খালটিও ইজারাদার নামের ভুমিদস্যুদের কবলে পড়েছে। খালটির বিভিন্ন স্থানে এপার থেকে ওপার পর্যন্ত অবৈধ নেট-পাটা দিয়ে খালটির পানি প্রবাহ ব্যহত করে চলেছে অসাধু একটি চক্র। তাছাড়া খালের দুপাশ ভরাট করে অবৈধ ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। খালটির কেওড়াতলা নামক স্থানে চিনেডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোহর আলীর ছেলে মধু অবৈধ নেট-পাটা দিয়ে খালটিকে প্রায় মৎস্য ঘেরে পরিনত করেছে। তাছাড়া সখিপুররের মাঘরী চন্ডীপুরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত মাঝের খাল এবং সদর ইউনিয়নের শ্রীপুর হয়ে রতেœশ্বরপুরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খাল দুটির বিভিন্ন স্থানের নেট-পাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাঁধাগ্রস্থ করা হচ্ছে। শুধু পানি নিষ্কাশন বাঁধাগ্রস্থ নয়, রতেœশ্বরপুরের শেষের দিকে খালটিকে স্থানীয় প্রভাবশালী ওয়াহেদ ঢালী ও তার ছেলে সুজা, মনিরুল সহ বেশ কয়েকজন খালটির মুখ মাটির বাঁধ দিয়ে সম্পুর্ন খালটি মৎস্য ঘেরের মধ্যে দখল করে নিয়েছে। সবশেষে রয়েছে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ধাঁপার খাল। খালটি বয়সা, বাবুরাবাদ, ঢেপুখালী, দাইবুড়ি, সন্যাসীতলা, বড়হুলা, কামিনীবসু সহ এলাকা ভিত্তিক একাধিক নামে প্রবাহিত। নওয়াপাড়া বিভিন্ন এলাকার পানি এই খালটির মাধ্যমে মুলত সখিপুরের সাপমারা খালের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয় যুগ যুগ ধরে। কিন্তু অবৈধ নেট-পাটা, দখলদারিত্ব আর ইজারার নামে মৎস্য ঘের হিসেবে বেশ কিছু প্রভাবশালীর ব্যবহারের কারনে নব্যতা হারানোর পাশাপাশি বর্তমানে চরমভাবে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে বেশ কয়েকটি এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সহ খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহের ধারা। দীর্ঘদিন ধরে দেবহাটা উপজেলার এসকল সরকারী খাল প্রভাবশালী, সুবিধাবাদীদের অপব্যবহারের ফলে নব্যতা হারাতে বসলেও, খালগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ ও নেট-পাটা অপসারনে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহন না করায় ক্রমশ মানুষের মাঝে খাল দখলের প্রবনতা বেড়েই চলেছে। আর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হওয়ায় তলদেশ ভরাট হয়ে খালগুলো নব্যতা হারিয়ে গতিহীন হয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে জনদুর্ভোগে পড়ছে সাধারন মানুষ। তাই অবিলম্বে খাল দখলের মহোৎসব বন্ধ সহ অবৈধ নেট-পাটা অপসারনে মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিচালনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলাবাসী।