দেশে হাজার হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী রয়েছেন। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে যাদের থাকে পাহাড়সম প্রতিবন্ধকতা। ঠিক তেমনই চোঁখের আলোয় পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পায়না হরিবল বোনার্জি। তবু থেমে যায়নি। বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে হামাগুঁড়ি দিয়ে এগিয়ে চলে স্বপ্নের পথে। অদম্য ইচ্ছে আর আগ্রহে শিক্ষার আলোয় নিজেদের আলোকিত করার প্রাণপণ চেষ্টা। সুস্থ সবল মানুষের মত মেধা মননে কৃতিত্ব রাখছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হরিবল বোনার্জি।
চোঁখের আলো নেই, অন্তরের আলো দিয়ে ২০২২ সালের সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় হরিবল বোনার্জি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগে অংশগ্রহণ করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিবল বোনার্জি (১৭) এর বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউপি হুগলিছড়া চা বাগানে। মা বিশখা বোনার্জি ও বাবা অনিল বোনার্জি দু’জনেই চা বাগানের শ্রমিক। প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু হয় এনজিও ব্রাক স্কুল থেকে। সেখান থেকে ভাল ফলাফলে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের পাশেই মৌলভীবাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসের আবাসিক হোষ্টেলে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যায় অবিরল।
হরিবল বোনার্জি বলেন, ‘আমি যে পড়ালেখা করে এতদূর এগিয়ে আসতে পারবো সেটা কখনো ভাবতেই পারি নি। আমরা পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠির লোক চা শ্রমিক জনগোষ্ঠী। ব্র্যাক স্কুলে থেকে আমি পিএসসি পরীক্ষা দেই। জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করি। এরপর পড়ালেখার প্রতি আরো বেশি আগ্রহ জন্মে যায়। ভর্তি হই মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সমাজসেবা অফিসের সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের পিছিয়ে পরা চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে টিউশনিও পড়িয়েছি। করোনাকালীন সময়ে যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন আমার গ্রামের শিক্ষার্থীদের একসাথে নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।’
✪ আরও পড়ুন: যে কোনো মূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে: প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, পড়ালেখার জন্য আসলে দিনে একটানা দশ ঘন্টা পড়তে হয় না। মনযোগ দিয়ে কয়েকঘন্টা পড়লেই হয়। পরীক্ষার হলেও আমার অন্যান্য সাধারণ ছাত্রদের সাথে পরীক্ষা দিয়েছি। শুধুমাত্র আমি সহযোগি হিসেবে অষ্টম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী ছিলাম। আমি বলে বলে দিয়েছি আর সে লিখে লিখে দিয়েছে। আমার স্বপ্ন ছিল একজন গায়ক হওয়া। অনেকটা পথও এগিয়েছিলাম। কিন্তু আর গায়ক হয়ে উঠা হয়নি। এখন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষক হতে চাই।
হরিবল বোনার্জি তার এই সফলতার জন্য সকল শিক্ষক, মা-বাবা, সমাজসেবা অফিসের রিসোর্স শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষকগণ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সহযোগিকে উৎসর্গ করতে চান। ভবিষৎ জীবনে সফল হওয়ার জন্য সে সকলের কাছে আশির্বাদ ও দোয়া চাই।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. খ. ম ফারুক আহমদ বলেন, আমদের একজন অন্ধ ছাত্র হরিবল বোনার্জি এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছেন। সে গরীব পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে এই ফলাফল অর্জন করেছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি। আশাকরি সে তার জীবনে সফল হবেন। আগামীতে আশা করি হরিবলের জন্য আরো ভালো ও সুন্দর কিছু অপেক্ষা করছে।