মৌলভীবাজারের সদর ও রাজনগর উপজেলার কাউয়াদীঘি হাওর ও আশপাশের প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে দুই ফসলা নিরাপদে তোলার জন্য মনু নদের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৮২ সালে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পর শুকনো মৌসুমে মৌলভীবাজারের মনুনদে নির্মিত ব্যারেজের পাশ দিয়ে খাল খনন করে বোরো জমিতে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে খালগুলো সংস্কার না করায় ভরাট হয়ে যায়। এতে বিঘ্নিত হয় পানি সরবরাহ। ফলে সদর উপজেলার একাটুনা, কচুয়া, বড়কাপন, রায়পুর, বানেশ্রী, পাড়াশিমইল, কান্দিগাঁও, সানন্দপুর, জুমাপুর, জগৎপুর ও কাদিপুর এলাকার প্রায় ৩শত একর বোরো জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে পড়েন কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালো ফসলের স্বার্থে বোরো চাষ নিশ্চিতে সময়মতো পানি সরবরাহের দাবি ছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। এবারও মনু সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২টি গ্রামের ৩ শতাধিক একর ফসলের জমিতে পানির অভাবে সেচ সংকট দেখা দেয়। মনু নদ সেচ প্রকল্পের সেচ খালের বিভিন্ন স্থানে ঘাস, কচুরিপানা, মাটি ও ময়লা-আবর্জনায় ভরাট ছিল। দেড় থেকে দুই ফুট লম্বা ঘাস গজায়। খালের শেষের দিকের অংশ উঁচু হয়ে থাকায় মনু নদের মনু ব্যারাজে স্লুইসগেট (জলকপাট) খুলে দেয়া হলেও পানি খালের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি।
কয়েক বছর ধরেই পানি নিয়ে এই টানাপোড়ান চলছে চাষ। বোরো চাষের মৌসুমে স্থানীয় কৃষকেরা ঘাস, আগাছা পরিষ্কার করে জমিতে পানি নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না।বোরো ধান চাষের মৌসুম চলছে। তবে পর্যাপ্ত পানির অভাবে কয়েকদিন আগেও যে ফসলের মাঠ খাঁ খাঁ করছিল, এখন সেই মাঠ জুড়ে সবুজের হাতছানি। কিন্তু তৃপ্তির হাসির ফাঁকেও শঙ্কায় রয়েছেন মৌলভীবাজারের হাওরপারের কৃষকেরা।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
কাদিপুর এলাকার কৃষক আলী হোসেন বলেন, ‘এক একরে যেখানে ৪৫ থেকে ৫০ মন ধান পাওয়া যেত, এবার দেরিতে চারা রোপণের ফলে একর প্রতি ৩৫ থেকে সর্ব্বোচ্চ ৪০ মণ ধান পাওয়া যাবে। বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষকের জন্য এখন প্রতিটি দিনই খুব গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে বানেশ্রী এলাকার কৃষক মুকুন্দ দাশ বলেন, পানির অভাবে সময়মতো জমি চাষ ও হালি চারা রোপণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফলন এবার আশানুরূপ আসবে না।’
জানা গেছে, সময়মতো পানি সরবরাহের দাবি জানিয়ে হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে গত ৭ জানুয়ারি পাউবো মৌলভাবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে স্মারকলিপি দেন এলাকার কৃষকরা। পরে তড়িঘড়ি করে সেচ খাল পরিষ্কার করা হয়। এতে কৃষকদের ফসলের জমিতে পানি প্রবেশ করে। বোরো চাষের সুযোগ পান হাওরপাড়ের কৃষকরা।
শেষ পর্যন্ত বোরো চাষ যে শুরু করা গেছে জানিয়ে হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ বলেন, ‘রোপণে যত দেরি হয়, ততই হালি চারার বয়স বাড়ে। আর হালি চারার বয়স বাড়ার কারণে ফসলের উৎপাদন কমে যায়। এবার চারা রোপণে সময়মতো পানির সরবরাহ না হওয়ায় ফসল কম উৎপাদন হবে। ফসল কম পেলে কৃষকদের পক্ষে খরচ তোলাই কঠিন হবে। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তারা সেই শঙ্কায় আছেন।’
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী খাল খনন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মনু ব্যারাজের স্লুইসগেট (জলকপাট) বন্ধ রেখে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।’
ডিবিএন/এসডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান