মো. কামরুজ্জামান, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি: উচ্চ আদালতে আদেশ ব্যক্তিমালিকানধীন পুকুর হবে প্রাকৃতিক জলাধার। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে তা কার্যকর হচ্ছে না। পৌর সভার বাগিছাপাড়ায় শতবর্ষী পদ্মপুকুর কৌশলে দখলে নিয়ে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে ওই এলাকার বিপ্লব কৃষ্ণ রায় ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। দখল কার্যক্রমে এলাকাবাসী বাধা দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। তবে বিপ্লব কর্মকার দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে ওই জমি তার নিজের এবং এটি একটি মজাপুকুর বলে দাবি করেন।
দুর্গাপুর পৌরসভার বাগিছাপাড়ার বাসিন্দা দুর্গাপুর পৌর সভার সাবেক চেয়ারম্যান কামাল পাশা এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি স্থানীয় এমপি, পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, থানা পুলিশসহ বিভিন্ন দপ্তরকে জানিয়েছেন এবং এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। কিন্তু কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না।
অভিযোগে জানা গেছে, জেলার দুর্গাপুর পৌর সভার বাগিছাপাড়া এলাকায় দুর্গাপুর মৌজায় আর.এস ৭৬২ এবং আর.ও.আর তথা এস.এ খতিয়ানে ২৩২১ দাগের শতবছরের পুরনো ৬১ শতাংশ ভূমিতে পুকুর ছিল। ওই পুকুরটির নাম ছিল পদ্মপুকুর। সারা বছর ওই পুকুরে পানি থাকত। বর্ষায় চারপাশের বাসাবাড়ির পানি ওই পুকুরে জমা হত। পুকুরের চারপাশের মানুষ পুকুরটির পানি প্রাত্যহিক কাজে ব্যবহার করত। ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে সরকার পুকুরটি একোয়ার করে নেন। আর.এস ও আর.ও.আর এ পদ্মপুকুর হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। ২০০১- ২০০২ অর্থ বছরে সরকারি অর্থায়নে পৌর সভা পুকুরটি সংরক্ষনের জন্য গার্ডওয়াল নির্মাণ করে।
সর্বশেষ ভুমি জরিপে পুকুরটি বিপ্লব কৃষ্ণ রায় কৌশলে প্রয়াত বাবা বিমল কৃষ্ণ রায়ের নামে করিয়ে নেন। পুকুরে বালি ও মাটি ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। এতে করে বর্ষায় জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়। বাগিচাপাড়ায় বিদ্যমান শতবছরের পুরনো সরকারি জলাশয় পদ্মপুকুরটি যেন ছিলো কালের সাক্ষী। সৌন্দর্য্য মন্ডিত পদ্মপুকুরটি ব্যক্তির দখলে চলে যাওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জনস্বার্থে পরিবেশের ভারসাম্যের সহায়ক শতবর্ষী পদ্মপুকুরটি রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় ভূমি অফিসের দৃষ্টি বরাবরে অভিযোগ দিলেও কাঙ্খিত সুফল পাননি এলাকাবসী।
অভিযোগকারী কামাল পাশা বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫(সংশোধিত-২০১০) এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি এমনকি স্বায়ত্ত¦শাসিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ সালে সংশোধিত অনুযায়ী যে কোন ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পুর্ন নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীব বৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত ক্ষতি ও বিধ্বংসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
গ্রহণের বিধান রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী কোন পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তিমালিকাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত পুকুরগুলো ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনের ২(চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কেন আমাদের শতবর্ষী এই পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। বিপ্লব কৃষ্ণ রায়ের খুঁটির জোর কোথায়। সরকার যেখানে পুকুর জলাশয় ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেখানে বিপ্লব কৃষ্ণ রায় সরকারি শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্ষাই করছেন না। পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।
বিপ্লব কৃষ্ণ রায় বলেন, জলাশয় নয়, এটি একটি মজাপুকুর। পুকুরটি আমার দখলে রয়েছে। সরকারিভাবে আমার বাবা বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। আমিতো এ জায়গায় ভরাট ও ভবন নির্মাণের কাজ করতেই পারি। আমি নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করছি। ওই জমির বি.আর.এস ও খারিজ আমার নামে। স্থানীয় কিছুলোক বিরোধীতা করছে। দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা খানম জানান, সরকারি এ পুকুরটি নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে টানাটানি চলছে। তবে পুকুরটির দ্বন্ধ নিরসনে বিজ্ঞ আদালত রায় দিয়েছে। ওই রায় নিয়েই মাটি ভরাট করছে। লিজ মানির রেকর্ডও তাদের রয়েছে। তবে এ বিষয়টি তিনি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখবেন।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, ওই পুকুরটি নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দুর্গাপুর ইউএনকে বলা হয়েছে।