ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় দুই বার জাতীয়ভাবে পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ তৈরি হয়েছে। অপরদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এছাড়াও পক্ষে বিপক্ষে স্যোশাল মিডিয়ায় দুই পক্ষের দুটি ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল, থানায় সাধারণ ডায়েরী, শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে হয়েছে লিখিত অভিযোগ।
জানা যায়, ওই স্কুলে গত ২০১২ সাল থেকে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়ে রয়েছে। হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরকারি কারিকুলামকে সমস্যা দেখিয়ে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে অভিভাবক ও পৌর শহরের স্থানীয়রা। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর অভিভাবক সদস্য নওরোজ কাউসার কাননকে সাথে নিয়ে প্রায় ১০০ জন অভিভাবক বিদ্যালয়ে জড়ো হয়। পরে ১৫ থেকে ২০ জন অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের রুমে প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষার পর ও প্রধান শিক্ষক তার চেয়ার এসে বসে।
এসময় অভিভাবকরা ভর্তি কেন বন্ধ করা হয়েছে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ছেলিমা সিদ্দিকা আলাপচারিতার এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে বলেন, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত একরকম কারিকুলাম এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম হওয়ায় এটিকে সমস্যা মনে করায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি বন্ধ করার কথা বলেন। এসব কথা শুনে অভিভাবক সদস্য কানন সহ অন্যান্য অভিভাবকরা বলে সরকারি নিয়মকে অবজ্ঞা করে আপনি এটা করতে পারেন না। এভাবে কথাকাটা কাটির এক পর্যায়ে দই পক্ষেই উত্তেজিত হয়ে উঠে। এই উত্তেজিত ঘটনার দুপক্ষের দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক ভাইরাল হলে বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে দুই পক্ষেই থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছে।
ওই স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিউটি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা আক্তার স্কুলের স্টাপ মিটিংয়ে বলেন এবার তিনি ৬ ষষ্ঠ শ্রেণিতে কোন ছাত্র ভর্তি করাবেন না। প্রধান শিক্ষকের এমন মন্তব্য নিয়ে অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা এর বিরোধিতা করেন।
এ ব্যাপারে অভিভাবক ও স্কুল কমিটির সদস্য সাবেক কাউন্সিল সিরাজউদ্দিন সিরু, মো. ইস্তেকার, মহসিন, কাউন্সিল সেফাউল আলম, রুমা বসাক, সেলিনা আকতার, মুনজুরুল আলম, মো. মাসুম, রফিকুল ইসলামসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ওই সহকারি প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ধীরেন্দ্রনাথ ও শেফালী খাতুনসহ কয়েকজনকে বদলী করলে সব ঠিক হয়ে যাবে, এরাই স্কুলে গ্রুপিং কোচিং বানিজ্য সৃষ্টির মূলহোতা।
এ ব্যাপারে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছেলিমা সিদ্দিকার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৩ ডিসেম্বর এর ঘটনাটি খুবই দুঃখ জনক আমি তাদের কছে এরকম আচরণ প্রত্যাশা করিনি। আমি আমার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানাচ্ছি। অপরদিকে অভিভাবক কাননসহ অন্যান্যরা প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক ধীরেনন্দ্রনাথ আমাদের সাথে খুবই নেক্কারজন আচরণ করেছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
সহকারী শিক্ষা অফিসার ঘ্যানশ্যাম রায় বলেন,বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে কোচিং বাণিজ্য ও তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়েই মূলত গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বিধায় স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
এ ব্যপারে পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুলটির বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে আমাকে অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছে স্কুলটির আগের সুনাম ফিরে পেতে প্রাথমিক অধিদপ্তরের দ্রুত সু দৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রাহিমউদ্দিন বলেন, ওই ঘটনার সাথে জড়িত অভিযুক্ত শিক্ষকদের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, আমি বাকবিতন্ডার খবর পেয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।তিনি আরো বলেন শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত: রাণীশংকৈল পৌর শহরের স্বনামধন্য মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েটি ১৯৩৫ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টিতে প্রাক প্রাথমিক, শিশু শ্রেণিসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৭৪ জন এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রণি পর্যন্ত ১৫৩ জন ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। স্কুলটিতে সরকারিভাবে ১৮ জন এবং ২ জন গেস্ট টিচারসহ মোট ২০ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য স্কুলটি ২০০৯ সালে সম্বলিতভাবে জাতীয়ভাবে পুরস্কার পান এবং সারাদেশে স্কুলের শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ উপস্থিতির জন্য ২০১১ সালে দ্বিতীয় বারের মতো জাতীয় পুরস্কার পান। অথচো এরকম একটি স্কুলের এ বেহাল দশা দেখে রীতিমতো হতাশায় ভুগছেন অভিভাবকসহ পৌরবাসী।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ৯:৩৬ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি