তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৮৭ জন পদপ্রত্যাশী জেলা ছাত্রলীগের কাছে জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম। প্রায় ৫ বছর পর মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি হতে যাচ্ছে।
এ নিয়ে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে নেতাকর্মীদের মাঝে। সভাপতি পদে ১৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৮ জন জেলা ছাত্রলীগের কাছে জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়েছেন। চলছে মোটর সাইকেল শোডাউন ও নেতাদের দ্বারে দ্বারে পদপ্রাথীদের আনাগোনা। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে নিজ বলয়ের লোক আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) আহবানের শেষ দিন ছিল গত শনিবার। পদ প্রার্থীরা নিজেদের সমর্থন দেখাতে মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাসসহ শত শত নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে ব্যাপক শোডাউন করে জেলা কমিটির কাছে সিভি জমা দিয়েছেন।
তারপর থেকে সরগরম হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া। পদপ্রার্থীদের পক্ষে চলছে প্রচারণা। পাশাপাশি শুরু হয়েছে পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে দৌঁড়ঝাপ। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা জানিয়েছেন বিগত ৫ বছর ১৫/২০জন ছাত্রলীগের নেতা ছাড়া কাউকে কোন কর্মসূচীতে দেখা যায়নি অথচ সিভি জমাদানের দিন সভাপতি ও সম্পাদক পদে রাজনীতিতে অপরিপক্ক ও অপরিচিত শত শত কর্মীর পদভারে মুখরিত ছিল মৌলভীবাজার জনমিলন কেন্দ্র।
জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলা , কলেজ ও পৌর ছাত্রলীগ শাখার কমিটি গত ২০১৭ সালে গঠন করা হলেও তিনটি শাখার পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যর্থ ও মেয়াদ উত্তীর্ন হওয়ায় গত ১০ মে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগ এসব কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে ২১ মে পর্যন্ত শুধুমাত্র সভাপতি/সম্পাদক পদে সিভি আহবান করলে শুরু হয় ছাত্রলীগ পদ প্রত্যাশীদের মাঝে প্রানচাঞ্চল্য দেখা দেয়। বিশেষ করে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে ইউনিয়ন হতে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের কর্মীরা তৎপরতা শুরু করে।
একটি পক্ষ বলছে, হাইব্রিড কর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে। সেই হাইব্রিড কর্মীরাই নেতার পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইউনিয়নে যে নেতা কমিটিতে প্রবেশ করার যোগ্যতা নেই তারাই সিভি জমা দিয়েছে জেলায়। যার উদাহরণ সভাপতি পদে ১৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৬৮ জন পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা।
সিভি জমার মধ্যে এলাকায় সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি হামিম মাহমুদ জয়, জাকির হোসেন পান্না, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাকের আলী সজিব, সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় রয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ন সম্পাদক সুমন আহমেদ, সাবেক পৌর কমিটির নেতা রাহাত আদনান সায়েম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকেরুল ইসলাম, পাপ্পু আহমদসহ আরো কয়েক জনের নাম উচ্চারিত হচ্ছে এলাকায়। আর এদের পেছনে রয়েছেন আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামীলীগ দলীয় সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জের আওয়ামী রাজনীতিতে স্বাভাবিক ভাবেই প্রভাব রয়েছে স্থানীয় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যেই হোক এই দুই বলয় বিদ্যমান থাকায় দুই পক্ষ হতেই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদটি পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগের ‘ক‘ ও ‘ফ“ আদ্যাক্ষের প্রভাবশালী দুই নেতার ভক্ত রয়েছেন কমলগঞ্জে। তারাও তাদের পক্ষের ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে থেকে সভাপতি/সম্পাদক মনোনীত করার জন্য জোর লবিং চালাচ্ছেন। পদ প্রত্যাশীরাও ছুটে চলেছেন নেতাদের ছায়ায়। তিন বলয়ের দিকে দোয়া নিচ্ছেন প্রার্থীরা। বলতে গেলে লড়াই চলছে নেতায় নেতায়। জেলা ছাত্রলীগ কমিটিতেও চলছে তদবির। এখন দেখার বিষয় কারা আসতে পারেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে।
তৃনমুল ছাত্রলীগের সাধারণ কর্মীদের দাবী, সম্মেলন এর মাধ্যমে কমিটি গঠিত হলে প্রকৃত নেতা খুঁজে পাওয়া যেত এবং আওয়ামীলীগ নেতারা মুল্যায়িত হতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা বললেন, যেভাবে মহড়া দিয়ে পদ প্রত্যাশীরা সিভি জমা দিয়েছেন তা অবাক হয়েছি। শো-ডাউন দেখে মনে হযেছে চেয়ারম্যান বা এমপির নমিনেশন জমা দিচ্ছেন। তাছাড়া শো-ডাউনে অংশ নেয়া অধিকাংশ কর্মী ছাত্রলীগ করে কি না সন্দিহান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র নেতা বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদটি পুতুল খেলা নয়। যাকে তাকে দেয়া যায় না। যোগ্যতা দেখেই নির্বাচিত করা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারাণ সম্পাদক মাহবুব আলম জানান, কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে সিভি জমা নেয়া হয়েছে।। তাদের জীবনবৃন্তান্তে সঠিক তথ্য দিয়েছেন কি না তা যাচাই বাছাই করছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষনা করা হবে।