প্রতিদিনের মতো অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা দীপান্বিতা বিশ্বাস। অফিসের বাসেই আসা-যাওয়া করেন। নামেন শান্তিনগর। সেখান থেকে হেঁটেই ঢাকার মগবাজারের গাবতলার বাসায় ফেরেন। প্রতিদিন এতটুকু পথ হেঁটে যাতায়াত করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন তিনি। বৃহস্পতিবার ঘরে ফিরতে পারলেই দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। কিন্তু তার আগেই থেমে যায় তার জীবনের ক্যালেন্ডার। একটি ইট তথনছ করে দেয় তার ভালোবাসার সংসার।
গত ১০ জানুয়ারি হেঁটে বাসায় ফেরার সময় মৌচাক মার্কেট সংলগ্ন ফখরুদ্দীন পার্টি সেন্টারের সামনে আচমকা একটি ইট এসে পড়ে দীপান্বিতার মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। আশপাশ থেকে কয়েকজন মানুষ দৌড়ে আসেন তখন। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে দীপান্বিতাকে ঘিরে ভিড় জমে যায়। ততক্ষণে সব শেষ। পরে একটা রিকশায় নিথর দেহ তুলে দেন তারা।
দীপান্বিতা নিহত হওয়ার ঘটনায় রমনা মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন তার স্বামী তরুণ বিশ্বাস। তবে ঘটনার ছয়দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনো শনাক্ত করতে পারেনি ইটটি কোথা থেকে কীভাবে পড়লো। এছাড়া কাউকেই এ ঘটনায় গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। দীপান্বিতাকে টার্গেট করে ইট ফেলা হয়েছে, নাকি ফ্লাইওভার থেকে ইট পড়েছে সেটিই তদন্ত করছে পুলিশ। একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করেছে তারা। তবে ইট কোথা থেকে পড়ছে সিসি ক্যামেরায় এমন দৃশ্য খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন দীপান্বিতার এক বন্ধু। তিন বছরের ছেলে ঋষি রাজ সারাক্ষণ মাকে খুঁজে ফিরছে। অবুঝ শিশুটি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তার মা হয়তো অফিস শেষে বাসায় ফিরবে। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেও আর বাসায় ফেরে না রাজের মা।
দীপান্বিতার পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। দীপু সানা নামেও পরিচিত তিনি। ছিলেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। বিসিএসের পর বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী যে জায়গাটিতে চাকরির স্বপ্ন দেখেন, সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়োগ পরীক্ষার বিশাল যুদ্ধ শেষে দীপু ২০১৭ সালে সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম