মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষাধিক বন্যার্ত এখন নানান দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি, খাবার, স্যানিটেশন ও পানিবাহিত নানা রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এরইসঙ্গে শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যেরও সংকট চরম আকার ধারন করেছে। তবে এবার অন্যান্য বছরের চাইতে বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণের দৃশ্যপট ভিন্ন। বানভাসিদের সার্বিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসছেন প্রবাসীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিদিনই জেলা জুড়ে বানভাসিদের মাঝে বিতরণ হচ্ছে খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন উপকরন। এমনটি বলছেন নদী ও হাওর তীরের বসবাসকারী বন্যাকবলিতরা।
তবে অভিযোগ উঠেছে ত্রাণসামগ্রী গ্রাম এলাকায় না পৌঁছানোর। প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যাদুর্গতরা হচ্ছেন বঞ্চিত। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণ পৌঁছে, তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। আবার অনেকেই শুকনো ও রান্না করা (পোলাও বা খিচুড়ি) খাবার দিচ্ছেন। কিন্তু বন্যাকবলিতরা বলছেন চাল, ডাল, তেল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দিলে তাদের জন্য বেশ উপকার হতো। কারণ তাছাড়া রান্না করা ওই অতিরিক্ত খাবারগুলো রেখেও খাওয়া যায় না কারণ তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।
এ বছর নদীশাসনের বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে আসা আকস্মিক বন্যা। ঘর নেই। ধানের জমি নেই। মাথাগোঁজার ঠাঁই’র সঙ্গে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, মৎস্যখামার আর সবজি খেতও। এখন সবই বানের পানির দখলে। তাই সব ছেড়ে প্রাণে বাঁচতে ঠাঁই নিতে হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র ও অন্যত্র। সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে তাদের দুর্দিনে এগিয়ে এসেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই বছর বছর বানভাসি হয়ে ত্রাণ নিতেও অনাগ্রহী। তারা চায় স্থায়ীভাবে এ রক্ষা বাঁধের সমস্যার সমাধান । যাতে প্রতি বছরই তারা এরকম বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পান। চলতি মাসের আকস্মিক বন্যায় জেলার মনু, ধলাই, ফানাই, জুড়ী ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। হঠাৎ নদীর বাঁধ ভাঙ্গা পানির স্রোতে মানুষের বসতভিটার সঙ্গে আশ্রয় হারায় হাঁস, মোরগ, গরু, মহিষসহ গৃহপালিত পশুগুলোও। গেল তিন বছর থেকে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের মনু নদী শাসনের উন্নয়ন প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণ বা সংস্কারসহ অন্যান্য কাজ হচ্ছে খুবই ধীরগতিতে। যা দৃশ্যমান নয়। চলছে লুটপাটের মহাৎসব চলমান এ কাজ নিয়ে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষোভের অন্ত নেই।
উপকারভোগীরা বলছেন, মনু নদী ছাড়া জেলার অন্যান্য নদীগুলোরও বাঁধ সংস্কার কিংবা স্থায়ী কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জেলার রাজনগর উপজেলার মনসুর নগর ইউনিয়নের কদমহাটা বাঁধ ভাঙ্গা এলাকায় গেলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আক্তার মিয়া, তালেব মিয়া, শামীম মিয়াসহ অনেকেই বলেন, তাদের এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বাঁধ ভাঙলেও তা মেরামতে সংশ্লিষ্টরা উদাসীন। কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ। তারা অনেকেই বলেন হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে ও উপচে বানের পানি প্রবেশ করে তাদের ধান, সবজি খেত, কৃষি ও ঘরবাড়ি ডুবিয়ে দিয়েছে। ওই এলাকার অনেকেই বলেন, বছর বছর বাঁধ ভাঙে। আমরা চরম অসহায় নদীর কাছে।
প্রবীণরা বলেন, আমাদের জীবদ্দশায় ১৫-২০ বার বাঁধ ভাঙলো কিন্তু তার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। আমার আর বন্যার্দুগত হয়ে ত্রাণ নিতে চাই না। এ বিষয়টির স্থায়ী সমাধান চাই। তাদের মতো ক্ষোভের সঙ্গে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন মনু ও ফানাই নদীর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর, হাজিপুর, টিলাগাঁও, রাউৎগাঁও, ব্রাহ্মণবাজারসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দারাও। একই দাবি জুড়ী নদীর জায়ফরনগর ইউনিয়নের ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকা ফতেহপুর, খলিলপুর, মনুমুখ ইউনিয়নের বিভিন্ন বসবাসকারী এলাকার বন্যায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের। তাদের দাবী আর যেন বাধঁ ভাঙ্গার ভয়ে কেউ যেন বাড়ি ফেলে যেতে না হয়। সেই দিকে নজরদারির জোর দাবি জানাচ্ছি।
আজ ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | রাত ৮:১৯ | রবিবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজ বাপ্পি