ইদানিং সব দলেরই রাজনৈতিক কর্মীদের মূখে একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় ” ত্যগী কর্মীদের মূল্যায়ন হচ্ছেনা”। সত্যিই যদি তাই হয় তবে দেশের রাজনীতি সংকটে। কর্মীবাহিনী ছাড়া দল অচল তা নেতারা অবশ্যই বোঝেন। তাহলে কর্মীদের মুল্যায়ন হচ্ছেনা কেন? রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। এক্ষেত্রে নেতাদের দায়িত্ব বেশী তবে কর্মীবাহিনীকে অগ্রাহ্য করে নয়। কর্মীরাই দলকে জনগনের কাছে নিয়ে যায়। রাজনৈতিক কর্মী নানাভাবে বিভক্ত। কর্মী আর সমর্থক এক নয় তবে, সমর্থক গোষ্ঠিও কর্মী। অনেকে কর্মী বা সমর্থক কোনটাইনা, এই শ্রেনীটি রাজনীতিতে লগ্নি খাটায়। দল ক্ষমতায় গেলে সুবিধা ভোগ করে দলের কাছ থেকে। এরা সংখ্যায় কম এবং জনসম্মুখে আসেনা। শেয়ার বাজারের মত এরা জনগনের অবস্থান বুঝেই লগ্নি খাটায় নেতাদের পিছনে। সব সরকারের আমলেই এই শ্রেনীটি ভাল থাকে। যারা দলের মাঠ কর্মী তারা নির্যাতিত হয়, দল সরকারে থাকলাও না থাকলেও তবে নিজেকে দলের সাচ্চা কর্মী পরিচয়ে গর্ববোধ করে। এই কর্মীদের মধ্যে যারা চতুর তারা সুবিধা আদায় করে নেয়, বাকীরা শুধু অনুযোগ করে। অসন্তোষ হয় এদের মধ্যেই বেশী। যারা এলাকাভিত্তিক অবস্থান গড়ে তুলেছেন, তাদের মধ্যেও অসন্তোষ। এরা এম পি হতে চায়। নমিনেশন না পেলে অন্য দলে চলে যায়। কেউ কেউ নির্বাচিতও হয়ে যায়। সংসদে গিয়ে নতুন দলের হয়ে বক্তব্য দেয় সরকারের বিরুদ্ধে নিজ দলের (আগে যে দল করতেন) বিরুদ্ধে, তাহলে নীতিটি কোথায়? রাজনীতি পেশা নয় জনসেবা।জনসেবাই যদি রাজনীতি হয় তাহলে, অসন্তোষ হবে কেন। আর যদি প্রাপ্তির আশাই রাজনীতি হয় তাহলে নীতিটি কোথায়? রাজনীতিতে যারা জনগনের আস্থা কুড়িয়েছেন তারা আমরন নির্যাতন সয়েছেন, সূখ উপভোগ করেননি। বংগবন্ধু ১৩ বছর জেল খেটেছেন। দল গোছাতে মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। এখন পাতি নেতারাও মন্ত্রীত্বের ইশারা পেলে দল ছেড়ে দেন, তাহলে ত্যগ কোথায়? সত্যিকার ত্যাগী কর্মী কিংবা নেতা অনুযোগ করেনা, কাজ করে জনগনের সেবায়। দল খুঁজে বেড় করবে ত্যগীদের, এমনটাই প্রত্যাশীত রাজনীতিতে। ইদানিং রাজনীতি আর কর্মী এই দুইয়ের সমন্বয়হীনতা সর্বত্র। নেতৃত্ব যেমন ত্যগীদের খোঁজ রাখেননা, ত্যগী নেতাকর্মীরাও রাজনীতি করেনা। সকলেই নেতা তাই, অনুযোগ একে অন্যের বিরুদ্ধে নিজ দলেও। করোনা পরিস্থিতিতে এই অভিযোগ এখন জোরে শোরেই শোনা যাচ্ছে। ব্যর্থতার অভিযোগে দায়ী করছেন দলের নেতাকেও। তাকে দিলে এমন হতনা এমন ভাব প্রকাশ করছেন কৌশলে। বিষয়টি মনে হয় নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় নিয়ে আলোচনা করা জরুরী। প্রকাশ্য অভিযোগের কারনে বিরোধী পক্ষ গালফুলিয়ে তা প্রচার করে অযোগ্যতার অভিযোগে। সরকারী দলের মধ্যে সুদ্ধি অভিযানের কথা বলাবলি হলেও কার্যত কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। নবীনদের টেনে আনলেও দলকে গতিশীল করা যায়নি। কিছু ভাল নেতৃত্ব এলেও অভিযোগ কমেনি তাই, রাজনীতির নীতিটি এখন পরিবর্তন দরকার। ত্যগী বলে দলের অভ্যান্তরেই বিরোধ চলেছে যা পরবর্তি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। সবাই ত্যগী না আবার, সবাই কৌশলিওনা। যোগ্য নেতৃত্বের সন্ধান করতে এখনোই উদ্যোগ নেওয়া জরুরী। করোনা পরিস্থিতি সরকারের অভিজ্ঞতাটিকে মাথায় রেখে দল গোছানো এখন প্রয়োজন নয় জরুরী।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
রাজনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক
টরেন্টো, কানাডা
২৩ জুলাই ২০২০।