তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্কি পর্যটনকেন্দ্রে একটি হোটেলে ভয়াবহ আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। হোটেলটিতে শীতকালীন ছুটি কাটাতে পরিবারসহ অনেকেই এসেছিলেন। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে।
আংকারা থেকে ১৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কারতালকায়া রিসোর্টে ভোর ৩টা ৩০মিনিটে আগুন লাগে এবং অতিথিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া মৃতের সংখ্যা ৬৬ জন বলেছিলেন। পরে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত মৃতের সংখ্যা এখন ৭৬।
তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত ৫২ জন মৃতের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বাকিদের পরিচয় নির্ধারণের জন্য কাজ করছেন। তিনি আরো বলেন, বেশিরভাগ মৃতদেহ তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হোটেলের আতঙ্কিত অতিথিরা রশি ব্যবহার করে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। ফুটেজে দেখা গেছে, জানালাগুলো থেকে বিছানার চাদর ঝুলছে। হয়ত কেউ পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। হোটেলের তৃতীয় তলা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে আসা আতাকান ইয়েলকোভান আইএইচএ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, ওপরের তলার লোকেরা চিৎকার করছিল। তারা জানালা দিয়ে বিছানার চাদর ছুঁড়ে ফেলেছিল, কেউ কেউ লাফ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলের একজন কর্মচারী বলেছেন, তিনি জানালার কাছে অতিথিদের সাহায্যের জন্য চিৎকার করতে শুনেছেন। তিনি আইএইচএকে বলেছেন, আমি একজন বাবাকে তার বাচ্চা কোলে নিয়ে বালিশ চাইতে দেখেছি, যাতে তিনি তার ছেলেকে বালিশের ওপর ফেলে দিতে পারে। ভাগ্যক্রমে জরুরি পরিষেবার লোকজন তাকে উদ্ধার করেছিলেন। তবে তার ওপরের তলায় দুই নারী জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে মারা যান।
স্কি হোটেলের এমন সময় ঘটনাটি ঘটেছে যখন এটিতে বহু অতিথির আগমন ঘটে। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,০০০ মিটার ওপরে অবস্থিত এবং শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া দুই সপ্তাহের শীতকালীন ছুটির কারণে লোকজনে পূর্ণ ছিল।
দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হোটেলটিতে ২৩৮ জন অতিথি অবস্থান করছিলেন তখন। মৃতদের পাশাপাশি আরো ৫১ জন আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কামাল মেমিসোগলু বলেছেন, ১৭ জনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং ৩৪ জন এখনও হাসপাতালে ভর্তি। এ ছাড়া একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন।
ইয়েরলিকায়া বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, পূর্বে এই সংখ্যা চারজন বলা হয়েছিল। তদন্তকারীরা আগুন লাগার কারণ, সম্ভাব্য অবহেলা এবং কে এর জন্য দায়ী থাকতে পারে তা খতিয়ে দেখছে। তদন্তাধীনদের মধ্যে হোটেলের মালিকও ছিলেন।
এ ঘটনায় জীবিত একজন আইলেম সেন্টুরক বলেছেন, ঘন কালো ধোঁয়া থাকা সত্ত্বেও তিনি এবং তার মেয়ে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন কিন্তু তার স্বামী আটকা পড়ে যান। তিনি বলেন, যদিও তিনি আমাদের ঠিক পিছনে ছিলেন, ধোঁয়ার কারণে আর নিচে নামতে পারেননি, তাই তিনি জানালা থেকে নীচের বারান্দায় লাফ দেন। একটি গাড়ির ছাদে নিরাপদে লাফ দিয়েছিলেন তিনি।
জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টার সময় কমপক্ষে তিনজন ব্যক্তি পড়ে মারা যান বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগুন রেস্তোরাঁ থেকে শুরু হয় এবং দ্রুত কাঠের আস্তরণের কারণে পুরো হোটেলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এর কারণ স্পষ্ট নয়।
রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান এটিকে বুধবার জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন। পর্যটনমন্ত্রী নুরি এরসয় বলেছেন, হোটেলটি ২০২৪ সালে অগ্নি পরিদর্শনে উত্তীর্ণ হয়েছে। তবে কিছু বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি বলেছেন, কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না।
গত রবিবার থেকে হোটেলে থাকা এবং বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকার নেওয়া একজন ব্যক্তি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, কোনো অ্যালার্ম ছিল না, কোনো ধোঁয়া সনাক্তকারী যন্ত্র ছিল না এবং অগ্নি নির্বাপণ কোনো কক্ষও ছিল না। যদিও দশম তলা পর্যন্ত ধোঁয়া ছিল। আগুন নেভানোর পর ভেতরের ফুটেজে দেখা যায় সব পুড়ে গেছে।
তুরস্ক যখন মৃতদের গণনা করতে ব্যস্ত তখন ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন, ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, জার্মান রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টাইনমায়ার, আজারবাইজানের রাষ্ট্রপতি ইলহাম আলিয়েভ এবং গ্রীক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিসের মতো নেতারা এ ঘটনায় সমবেদনা জানাতে শুরু করেন।
সূত্র : এএফপি।
আজ ৮ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | শীতকাল | ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি | সন্ধ্যা ৭:০০ | বুধবার
ডিবিএন/এসই/ এমআরবি