মোঃ আমিন আহমেদ, সিলেট প্রতিনিধিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে লাঞ্ছিত ও হাতকড়া পরিয়ে জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার ঘটনায় সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। এরআগে এই ঘটনায় আরও দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্পাদক আবুল হাসেম আলমকে বহিস্কার করা হয়। এবং পরে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গতকাল বুধবার রাতে ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। পুলিশের দুইজন সদস্যের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠায় ও দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ওই ওসিকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
এর আগে মঙ্গলবার রাতেই ঢাবি শিক্ষার্থী ঘটনাটি পুলিশ সুপারকে অবগত করার পরপরই মঙ্গলবার রাতে ধর্মপাশা থানার অভিযুক্ত থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এই ঘটনায় বহিস্কৃত জয়শ্রী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বহিষ্কার করার এক ঘণ্টার মাথায় বুধবার বিকাল ৫ টায় আবুল হাসেম আলমকে জয়শ্রী বাজার থেকে আটক করে পুলিশ। এর আগে বুধবার বিকাল ৪ টায় ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় আবুল হাসেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এদিকে আবুল হাসেম আলম, তার ছেলে আল মুজাহিদসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে বুধবার রাত ৮ টায় ধর্মপাশা থানায় হত্যা চেষ্টার মামলা দাখিল করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান। থানায় অভিযোগ দাখিল করার পর আটকৃকৃত আলমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। থানার অভিযোগে প্রধান আসামী আলমের ছেলে আল মুজাহিদ, দ্বিতীয় আসামী আবুল হাসেম আলম।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ বিলকিছ বলেন, ‘দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্তটি অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটিতে পাঠানো হবে। আলম অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি। ঘটনার জন্য জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ দায়ী। আলমের উপস্থিতিতে তার ছেলে আল মুজাহিদের নেতৃত্বে বেশ কিছু লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খানকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের জয়শ্রী বাজারে লাঞ্ছনার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আফজাল খান (২৪)। আফজাল খানের বাড়ি উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আফজাল গত ২৯ মার্চ দুপুরে ফেসবুকে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় আফজাল নিজ গ্রাম মহেশপুর থেকে জয়শ্রী বাজারে গেলে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে আল মুজাহিদ (২৫) কয়েকজনকে নিয়ে আফজালের কাছে ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে ব্যাখ্যা চান। আফজাল বলেন, হেফাজতে ইসলামকে ব্যঙ্গ করে কোনো পোস্ট দেননি। তবে হেফাজতের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজের প্রতিবাদে একটি পোস্ট দিয়েছেন। এ নিয়ে আফজাল ও মুজাহিদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। পরে মুজাহিদের পক্ষের লোকজন আফজালকে বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আটকে রাখেন। পরে ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর সেখানে উপস্থিত হন ধর্মপাশা থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন।
এ বিষয়ে জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও তার ছেলে আল মুজাহিদ বলেন, হেফাজতকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি। ছাত্রলীগ নেতা তখন ইসলাম নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করায় পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়ে স্থানীয় লোকজন তাকে দলীয় কার্যালয়ে আটকে রেখেছিল। তাকে মারধর বা লাঞ্ছিত করা হয়নি। তবে আফজালের দাবি, ধর্মপাশা থানার ওসির নির্দেশে তাকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার বিবরণ সাদা কাগজে লিখে তাতে সই রেখে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।