চিলাহাটি আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করা হয়েছে। অদ্য ০৪ নভেম্বর রোজ শনিবার ১:৩০ মিনিটে চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনে মাননীয় রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এই আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন করেন। এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি বৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন মোঃ আফতাব উদ্দিন সরকার (মাননীয় সংসদ সদস্য) ডোমার-ডিমলা নীলফামারী-১, জনাব অসীম কুমার তালুকদার মহাব্যবস্থাপক পশ্চিম অঞ্চল (বাংলাদেশ রেলওয়ে) রাজশাহী, জনাব পঙ্কজ ঘোষ জেলা প্রশাসক নীলফামারী, জনাব সরকার ফারহানা আক্তার সুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক (কেন্দ্রীয় মহিলালীগ), স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং আরো অনেকেই।
চিলাহাটি রেলস্টেশন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত। উত্তরাঞ্চলের শেষ রেলস্টেশন এটি। চিলাহাটি-ভারতের হলদিবাড়ি দিয়ে জলপাইগুড়িতে রেলপথে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস চলাচল করে আসছে। তবে চিলাহাটি স্টেশনে যাত্রী ওঠা-নামার ব্যবস্থা না থাকায় এ ট্রেনের কোনো সুবিধা পাচ্ছিল না উত্তরাঞ্চল ও চিলাহাটির মানুষ। চিলাহাটির মানুষ এবং উত্তর অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি চিলাহাটি স্টেশনে মিতালি এক্সপ্রেসে উঠে হলদিবাড়ি হয়ে জলপাইগুড়ি যাওয়ার।
দেশের অভ্যন্তরে ইমিগ্রেশন না থাকায় শুধু ঢাকায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কার্যক্রম সম্পন্ন করে যাতায়াত করতে হয় চিলাহাটি হয়ে জলপাইগুড়ি এই মিতালী এক্সপ্রেসে। বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগ স্থাপনকারী এ ট্রেনে যাতায়াতের জন্য উত্তরবঙ্গে ইমিগ্রেশন চালুর দাবি শুরু থেকেই হয়ে আসছে। সেটা মাথায় রেখেই প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চিলাহাটিতে আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনের পর খুব শিগগিরই এই চিলাহাটি স্টেশন থেকে মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠা-নামার সুযোগ মিলবে এই খবরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয় জনগণ ও যাত্রীরা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে স্টেশনটির।তবে স্টেশনটি পুরোপুরি ব্যবহারের জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রথমে অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে স্টেশনটি। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন চালু করা হবে।
২০১৯ সালের জুনে শুরু হয় পুরো স্টেশনের আধুনিকায়নের কাজ। পরে করোনা মহামারি ও নকশা জটিলতার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ। নকশা সংশোধন করে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক স্টেশনের আদলে চিলাহাটি রেলস্টেশনের আইকনিক ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। আধুনিক যাত্রী সুবিধার জন্য টিকিট কাউন্টার, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগার তো থাকছেই, এর পাশাপাশি থাকছে রেলওয়ের কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভিন্ন বিভাগের অফিস। ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকছে ব্যাংক ও রেস্তোরাঁ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইমিগ্রেশন পয়েন্ট। চিলাহাটি হয়ে ভারতের শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাত্রীরা চলাচল করতে পারবে এই স্টেশন থেকেই। এতদিন মিতালী এক্সপ্রেসে যাতায়াতের জন্য ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন হলেও সেই সুবিধা চিলাহাটি থেকেই পাবেন উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা। ফলে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারবেন ভারতের জলপাইগুড়িতে।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বাংলাদেশের চিলাহাটি আর ভারতের হলদিবাড়ী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫৫ বছর পর ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০২১ সালের ২৭ মার্চ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য মিতালী এক্সপ্রেস উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে করোনা ও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় মিতালী এক্সপ্রেসের চলাচল। উদ্বোধনের প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালের জুনে চালু হয় যাত্রীবাহী ট্রেন মিতালী এক্সপ্রেস।
আজ ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | হেমন্তকাল | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি | সকাল ১১:০৯ | শুক্রবার
ডিবিএন/এসই/ মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি