বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ এব ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্তের তথ্য জানান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি। অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে।
এছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা এবং পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ৩ নম্বর সেক্টরের এইচ ব্লকের ৮ নম্বর রোডে ২৬ নং প্লটে ২১ কাঠা জমি এবং নিকুঞ্জ-১-এ ছোট ছেলের নামে একটি বাড়ি রয়েছে বলে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
অন্যদিকে হারুন অর রশীদ তার গ্রামের বাড়িতে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নামে অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল রিসোর্ট। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে।
২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি চালু করা হয়। রিসোর্টটির প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স রুমের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা। এছাড়া সুপার ডিলাক্স রুমের ভাড়া ১২ হাজার টাকা।
অন্যদিকে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের এসপি থাকার সময় থেকেই হারুন তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে বাড়ির পাশের হাওরে জমি কিনতে শুরু করেন। নামে-বেনামে তাঁর কমপক্ষে ১০০ একর জমি রয়েছে। আবার শতাধিক একর অন্যের জমি হারুনের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রেও হারুনের শতকোটি টাকার সম্পদ থাকার গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জের প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের পশ্চিম পাশে অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোস্তাক আহম্মদ কমলের ছয় একরের একটি পুকুর দখল করে চাষ করছেন হারুন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে হারুন তাকে নানাভাবে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ আছে।
এছাড়াও ডিএমপির ডিবির দায়িত্বে থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ তদন্ত করতে মাঠে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম