ডিবিএন ডেস্কঃ ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর্থিক লেনদেনে মানুষের চিন্তাধারাকে আমূল বদলে দিচ্ছে সময়োপযোগী এই প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন। বর্তমানে বিটকয়েন, এথেরিয়াম, রিপল, লাইটকয়েনসহ হাজারো ক্রিপ্টোকারেন্সি ভার্চুয়াল দুনিয়া চষে বেড়াচ্ছে। এতে জুয়া, হুন্ডি, চোরাচালান, সাইবার চাঁদাবাজিসহ অবৈধ লেনদেন উৎসাহিত হচ্ছে, যা চিন্তায় ফেলেছে বিশ্বের নীতিনির্ধারকদের। শুধু বিটকয়েন নয়, গত এক দশকে বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের উদ্ভব হয়েছে। আর্থিক বাজারে এরাও এখন বড় খেলোয়াড়। এই ই-ওয়ালেট এবং পেমেন্ট অ্যাপের গ্রাহকসংখ্যা এখন ৩০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
আর তাই বিটকয়েন ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো হাঁটছে বৈধ ডিজিটাল মুদ্রার পথে। এসব মুদ্রার ব্যবহার এবং প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো।বিশ্বের ৫০টি মুদ্রানীতি প্রণয়নকারী সংস্থা এখন ডিজিটাল মুদ্রা প্রবর্তনের চিন্তা করছে। চীনের ২৮ শহরে পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে এই মুদ্রা।ডিজিটাল এ মুদ্রার নাম দেয়া হয়েছে ‘ই-সিএনওয়াই’। গত বছর বাহামা দ্বীপপুঞ্জ বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিজিটাল মুদ্রা ‘সেন্ড ডলার’ চালু করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৫ সালের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল ইউরো নিয়ে আসতে চাচ্ছে। ব্রিটেন এরই মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আর বিশ্বের আর্থিক ব্যবস্থার শিরোমণি যুক্তরাষ্ট্র হাইপোথেটিক্যাল ই-ডলার ছেড়েছে।ফলে এখনকার এই ডিজিটাল মুদ্রার যুগে গ্রাহককে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে হিসাব খুলতে হবে না, বরং তখন মানুষ সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করবে। মাঝখানে থাকবে আলি পে বা ভেনমোর মতো কোন অ্যাপ। চেক লেখা বা অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করার বদলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরবরাহ করা ডিজিটাল মুদ্রায় সরাসরি লেনদেন হবে তখন।
প্রসঙ্গত, ডিজিটাল মুদ্রা হচ্ছে সেসব মুদ্রা, যা শুধু ভার্চুয়াল জগতে লেনদেন হয়। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই। বিনিময়ের সব তথ্য গোপন থাকে, বেশির ভাগ সময়েই থাকে অজ্ঞাত। এ ধরনের ডিজিটাল মুদ্রাকে বলা হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি। ২০০৯ সালে বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে বিটকয়েনের সূচনা ঘটে।বিটকয়েন এমন এক ধরণের মুদ্রা, যেটাকে কেবল অনলাইনে ডিজিটালি কেনা এবং বেচা যেতে পারে।
আর বর্তমান প্রচলিত মুদ্রার যে অনলাইন লেনদেন হয় তার সঙ্গে এই ডিজিটাল মুদ্রার একটি পার্থক্য রয়েছে। যেমন বর্তমানে আমেরিকায় অনলাইনে কেনাকাটা হলেও বিল করা হয় ডলারে, কিন্তু ডিজিটাল মুদ্রার ক্ষেত্রে ডলার নয় বরং মোবাইল ডিভাইস ব্যবহার করে বিক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ডিজিটাল মুদ্রা। বর্তমানে ভেনমো, পেপল বা অ্যাপল পের মতো যেসব পেমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে মানুষ অর্থ পরিশোধ করে তার চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।
এদিকে, মুদ্রার ইলেকট্রনিক রূপ এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। যেমন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ডলারের বাহ্যিক ব্যবহার মোট অর্থ সরবরাহের মাত্র এক-দশমাংশ। বাকি লেনদেন অনলাইনে। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এখন নিজেদের মুদ্রা তৈরি ও তার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছে। ওইসকল ডিজিটাল মুদ্রাকে বলা হচ্ছে সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি বা সিবিডিসি। সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সিবিডিসি) হচ্ছে এমন একটি মুদ্রা, যেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অনুমোদন দেবে এবং লেনদেন তারা তত্ত্বাবধান করবে।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ৮০ শতাংশই এই সিবিডিসি প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপান অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আর বোঝাই যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে ডিজিটাল মুদ্রাই ব্যাংকিং জগতের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠবে।
এছাড়া, ডিজিটাল মুদ্রার কল্যাণে আর্থিক খাতের উন্নয়ন হতে পারে। আদর্শিকভাবে মূল্য সংরক্ষণের খুবই নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে অর্থ, তাতে যেমন হিসাব রাখা সুবিধা, তেমনি পেমেন্টের সুবিধাজনক মাধ্যম। টাকার ব্যাপারে মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। ব্যাপারটা হলো, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের বিমা না থাকলে ব্যাংক পড়ে গেলে মানুষের টাকাও হারিয়ে যাবে। বিটকয়েন সবখানে গৃহীত হয় না। আর ক্রেডিট কার্ড তো হাতি পালার মতো ব্যাপার। সে কারণে সরকারি ডিজিটাল মুদ্রা হালে পানি পাবে, এমন সম্ভাবনাই বেশি। তবে ডিজিটাল মুদ্রার অনেক সুবিধা থাকলেও অনিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল জগৎ জালিয়াতির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠতে পারে, যার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সুত্রঃ দ্য ইকোনমিস্ট।