ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ে ধর্মীয়সভা শুনে বাড়ি ফেরার পথে এক সন্তানের জননীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ৯ মার্চ ধর্ষিত ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি রুজু করে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার (২ মার্চ) সদর উপজেলার মধুপুর গুদামপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এক সন্তানের জননী শিবযাত্রী ধর্মীয় সভা শুনতে পার্শ্ববর্তী ঢোলারহাট গৌরলাল মন্দিরে যান। একই গ্রামের পুঞ্জিকা সাধক ও তান্ত্রিক প্রকাশ চন্দ্র ঝোল প্রকাশ চন্দ্র ঝোল নামে এক ব্যক্তি ওই নারীকে ফোন করে রুহিয়া বাজারে দেখা করার জন্য অনুরোধ জানায়। সহজ সরল ওই নারী প্রতিবেশীর কথা রাখতে সন্ধা ৭টায় অটোচার্জার গাড়িতে করে রুহিয়া বাজারে আসেন। কিন্তু মৌচাক হোটেলের শ্রমিক মেজর (২৮) ওই নারীকে তার বাসায় নিয়ে যায় এবং তার কোলের শিশুকে জিম্মি করে ফেলে। খবর পেয়ে প্রকাশ চন্দ্র ঝোল ওই বাসায় গিয়ে গৃহবধূকে ক্যাথলিক মিশন রেলগেটের গেট কীপার শামীম হোসেনের (৩০) রেলের কোয়ার্টারে নিয়ে যায় এবং গেটম্যান শামিম হোসেন (৩০), হোটেল শ্রমিক এনামুল হক (৩৫), হোটেল শ্রমিক মেজর (২৮) ও উজ্জ্বল দাস (৩৫) নামে ৫ যুবক মিলে ওই গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, গভীর রাতে ওই গৃহবধূকে মিশনের পশ্চিমে ফাঁকা মাঠে নিয়ে গিয়ে তারা আরেকদফা ধর্ষণ করে।
পরদিন সকালে ধর্ষকরা ওই গৃহবধূকে রেলগেট এলাকায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে জানালেও পুলিশ তাৎক্ষণিত ওই গৃহবধূকে উদ্ধার কিংবা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান মধুপুর গ্রামের ইউপি সদস্য ইউসুফ আলী।
স্থানীয়রা ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে এবং গেটম্যান শামীমকে আটক করে। কিন্তু শামীম স্থানীয়দের ভুল বুঝিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলার লোহাগাড়া এলাকায় পালিয়ে যায় এবং আত্মগোপন করে।
এদিকে ধর্ষিতার স্বামী ভবানী চন্দ্র বর্মন অত্যন্ত গরিব হওয়ায় মামলা করতে আগ্রহী হননি। কিন্তু বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হলে প্রশাসনের টনক নড়ে এবং ধর্ষিত গৃহবধূ ন্যায় বিচারের আশ্বাস পেয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন।
অবশেষে বুধবার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে ধর্ষক তান্ত্রিক প্রকাশ চন্দ্র ঝোল, গেট কীপার শামিম হোসেন, হোটেল শ্রমিক এনামুল হক , হোটেল শ্রমিক মেজর ও উজ্জ্বল দাসকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন’২০০০(সংশোধনী/২০০৩)এর ৯(৩)/৩০ ধারায় জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে আবেদন করেন। বিচারক গোলাম ফারুক বিষয়টি আমলে নিয়ে বাদীর অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করার জন্য রুহিয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন।