আজিজুর রহমান প্রিন্স, ঢাকা, বাংলাদেশঃ কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় বিমান এবং রেলওয়েতে প্রতিবছর। এই দুই প্রতিষ্ঠানে লাভ দেখাতে পারেনি কোন সরকারই। টিকিট পাওয়া যায় না বিমানের। রেলও খালী যায়না তবুও লোকসান হয়। লাভ হিসাব করেইত বিমান আর রেলওয়ের টিকিটের মূল্য নির্ধারন করা হয়। তাহলে লোকসান হবে কেন?
ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের রেল মন্ত্রী হয়েছিলেন বিহারের লালু প্রসাদ যাদব। আলোচিত এই নেতা মন্ত্রী হয়ে রেলওয়ের লাভ দেখিয়েছিলেন। সাংবাদিকরা লালুজি কে প্রশ্ন করেছিল তার ম্যাজিক টা কি! লালু প্রসাদ যাদব তার স্বভাব ভঙ্গিতে উত্তর দিয়ছিলেন ” হামনে কুছ নেহি কিয়া স্রেফ চুরি বান্দ কিয়া”। বাংলাদেশের রেল মন্ত্রীরা কিছু করেননা বলা যাবেনা। রেলমন্ত্রী হয়েই বিয়ে করেন। দুর্নীতি বন্ধের কথা বলেন। তারপর একইভাবে চলতে থাকে দুর্নীতি আর চুরি। স্বাস্থ্য দপ্তরের পিয়ন দাড়োয়ানের মত রেল কর্মচারীরাও কেউ আর গরীব নেই। গরীব শুধু বাংলাদেশ রেলওয়ে। টিকিট পাওয়া যায় না ছাদেও। বসার যায়গা থাকেনা ভিতরে। দাঁড়িয়ে ট্রেনে ভ্রমন করতে হয়। তবুও রেলওয়ের লোকসান হয় কোটি কোটি টকা। হিসাবটি বুঝতে পন্ডিত হতে হয়না। অপচয়, চুরি আর দুর্নীতিই রেলওয়ের বারটা বাজিয়ে দিয়েছে। সঠিক নিয়ন্ত্রন আর চুরি বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হতে পারত।
লোকে বলে ” যে লঙ্কায় যায় সে’ই রাবন হয়” কাকে ভরসা করবে সরকার? এটা ঠিক যে রেলওয়ের কিছু সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে কিন্তু লোকসান কমেনি। লোকসান বন্ধ করা না গেলে হাজার বছরেও যতই দাবী করুক বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নতি হবেনা।
বাংলাদেশ বিমানের অবস্থাও অভিন্ন। প্রতি বছর শুধু অবনতিই হচ্ছে। বিমানেও লাভ নয় লোকসানের পরিমান বাড়ছে। আধুনিক বিমান এবং ভাল সার্ভিস দিয়েও লোকসান কমানো যাচ্ছেনা। পৃথীবির যে কোন ষ্টেশনে বিমানের টিকিট কিনতে গেলে শোনা যাবে টিকিট নেই। কিছু বাড়তি মূল্য দিলেই যে কোন দিনের টিকিট পাওয়া যায়। সব চেয়ে বড় দুর্নীতিটি হয় গ্রাউন্ডে। ১২ ডলারের যন্ত্রাংশ ১২০০ ডলার দেখিয়ে বিল পাশ করে নেয় যোগসাজোস করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ বিমান। যাত্রী বোঝাই জাহাজ উড়ে গেলে লোকসানের কারনটিত লালু প্রসাদের কথাতেই সত্য হবে। চুরি বন্ধ হতে হবে নাহয় একদিন যন্ত্র নেই বলে বিদেশের কোন এয়ারপোর্টে পরে থাকবে জাহাজটি। এই দুটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান সরকারী দপ্তরের চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। নিয়ন্ত্রন করা না গেলে পুরু দেশটাই দেউলিয়া হয়ে পরবে।
যোগাযোগ খাতের সব ক’টি প্রতিষ্ঠানই এখন দেউলিয়া। সড়ক পথের সব নিয়ন্ত্রন ব্যক্তি মালিকানায়। রাজস্ব উৎপাদনের লাভজনক প্রতিষ্ঠান লোকসান দেওয়ার দায়ভার কেউ এড়াতে পারবেনা। দুদক দেশের রাজস্ব খাত রক্ষা করতে বিমান, রেলওয়ে আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযান চালালেই থলের বিড়াল বেড়িয়ে পরবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধনে কে? এই তিন প্রতিষ্ঠানে লসের ভুত তাড়াতে না পারলে আরও এক লক্ষ কোটি টাকা বাজেট ভর্তুকি দিয়েও লাভ হবেনা। যোগাযোগ খাতে রাজস্ব উৎপাদন হয় প্রতিদিন। পরিমানটিও আকাশ চুম্বি। ট্রেড ইউনিয়ন, অসৎ কর্মচারী আর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মিলে এই লাভজনক খাতটি লুটেপুটে খায়।
বর্তমান সরকার দেশে ব্যপক উন্নয়ন দেখিয়েছে। পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে। এই সরকারই পারবে দেশের রাজস্ব খাত রক্ষায় সব অনিয়ম দুর করতে। চুরি বন্ধ না করা গেলে যতই অবকাঠামো নির্মান হউক দেশ উন্নত হবেনা। পদ্মা সেতুকেও দেউলিয়া করে দিবে শিঘ্রই।