হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কক্সবাজার প্রতিনিধি:: করোনাভাইরাস রোধে পর্যটন নগরী টেকনাফে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করার মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে যাচ্ছেন। এমন করুন ক্রান্তিলগ্নে দেশে অঘোষিত লকডাউন চললেও সাধারণ মানুষকে কোনভাবেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না।
খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি অন্যদেরও ঘরে রাখাই যেন দায় হয়ে উঠেছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে এবং বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে বলা হলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ও গ্রামের অলিতে গলিতে শত শত মানুষ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাস্তাঘাটেও কমতি নেই মানুষের। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বিপুল সংখ্যক রিকশা চলছে রাস্তায়। এসব যানবাহনে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করছে।
এছাড়া সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই কোথাও। ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে ভিজিডির পণ্য বিতরণ কিংবা গলির মুখের আড্ডা- সর্বত্রই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ তীব্র হয়ে উঠার আশংকা থেকে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী এবং প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট যৌথ বাহিনীর টহল আসতে দেখলে সবাই ভয়ে নির্জনে চলে গেলেও দুই চোখের আড়াল হলে ফের আড্ডায় মেতে ওঠে গ্রামের যুবক-তরুনদের আসর।
সংশ্লিষ্টতের মতে, করোনা রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সরকার গত ১৭ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর সাধারণ ছুটি বাড়িয়ে ৯ তারিখ পর্যন্ত করা হয়। সাথে শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় তা ১১ তারিখে গিয়ে পৌঁছে। সবাইকে ঘরে থাকার জন্যই কার্যত এই ছুটি ঘোষণা করা হয়। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়। দেশের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেশকে প্রায় লকডাউন করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এবং এসব তদারকির জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা পালনের জন্য মানুষকে ব্যাপকভাবে সচেতন করা হচ্ছে। টিভি ও সংবাদপত্রে প্রচারণা চলছে। প্রচারণা চালাচ্ছে প্রশাসনও। কিন্তু এত কিছুর পরেও কোনো ভাবেই মানুষকে ঘরে রাখা যাচ্ছে না। প্রথম দুদিন মানুষের মনে কিছুটা ভয় কাজ করলেও তৃতীয় দিন থেকে মানুষ রাস্তায় নামতে শুরু করে। সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে চরমভাবে ঢিলেঢালাভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত কয়েকদিন রাস্তাঘাটের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা নিম্ন আয়ের মানুষজনকে যেন ঘরের বাইরে টেনে আনছে। রাস্তায় রাস্তায় ত্রাণ দেয়ায় শত শত রিকশা চালক প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ফলে তুলনামূলক কম ভাড়ায় তারা বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করছে। আর এই ঘোরাঘুরি করা মানুষকে ঘরে রাখাটাই ক্রমে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
৩এপ্রিল শুক্রবার টেকনাফ বাজার, সাবরাং পরিষদ বাজার, লম্বরী পর্যটন বাজার, বাস স্টেশন মাছ বাজার, শাহ পরীরদ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। কোথাও কোনো ধরনের আতংকের লেশমাত্র নেই।
সামাজিক দূরত্বের কথা তো দূরের কথা, গলি ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে, গ্রামের মুদির দোকানের ভেতর কেরাম, দাবাসহ নানা খেলার উৎসব আমেজে আড্ডা দিচ্ছে কিশোর তরুণরা। রাস্তা-ফুটপাতে গা ঘেঁষাঘেষি করে বসে আছে শ্রমজীবী মানুষ।
এদিকে টেকনাফ মডেল থানার (ওসি) ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ এর নেতৃত্বে পুরো টেকনাফ উপজেলা জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ও জনসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, টেকনাফে যেন একটি মানুষও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে সবাইকে সুরক্ষা গ্রহণ ও হোম কোয়ারেন্টাইন মানতে কঠোরভাবে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম টেকনাফ উপজেলার সকল মসজিদের ইমামগণদের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক জানিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক নামাযের পূর্বে এবং পরে মসজিদ জীবাণু নাশক দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষাসহ মুসল্লীদের সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিদেশ ফেরত ব্যাক্তির প্রতি নজরদারি প্রসঙ্গে যোগাযোগ করতে সকলকে আহবান জানান। এবং জনগণকে নিরাপদ ও সুরক্ষা নিশ্চিত প্রসঙ্গে ঘরে থাকার আহ্বান জানান।
অপরদিকে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবুল মনসুর জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নির্লসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।