জো বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার খবর সারা বিশ্বের গনতন্ত্রকামী প্রগতিশীলদের জন্য আশার বানী। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আমেরিকা বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব হারায়, সারা বিশ্বের নেতৃত্বের আসন থেকে সরে গিয়ে হাস্যকর দেশে পরিনত হয়। এর সাথে গত এক দশক ধরে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে বিস্ময়করভাবে। বেশীরভাগ শক্তিদর দেশের ক্ষমতা সাম্প্রদায়িক শক্তির হাতে চলে যায়। এশিয়ার শক্তিদর দেশ চীনে যেমন প্রতিক্রিয়াশীল, সাম্প্রদায়িক শি জিন পেং ক্ষমতার একচ্ছত্র অধীকারি হয় তেমনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও সাম্প্রদায়িক মোদী সরকার ক্ষমতায় আসে। সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশে হানাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও ধর্ম বর্ণে বিভাজন বৃদ্ধি পায় আর অন্যদিকে অর্থনীতি ভেংগে পড়ে। যেটি হয়েছে বর্তমান ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রে। মোদি সরকার দেশের অর্থনীতির দিকে নজর না দিয়ে রাজ্য ভিত্তিক ইস্যূ তৈরী করে ভারতবর্ষের দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য জাতি-ধর্ম মিলিত বৈচিত্রময় একক সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়েছে, বৃহত্তর হিন্দু জনগোস্টির সমর্থন আদায় করে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করেছে, ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে বি জে পির ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে কিন্তু ভারতের অর্থনিতি পিছিয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ধর্ম ভিত্তিক জাতিকে বিভাজন না করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছে, যার ফলে দেশের কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে আর দেশের অর্থনীতি একটি শক্তিশালী ভিতের উপর দাঁড়িয়েছে। করোনার প্রভাবে যেখানে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির অর্থনীতির অবস্তা টালমাটাল সেখানে আমাদের অর্থনীতি অনেক সুসংহত। তবে শংকার জায়গা তৈরি হচ্ছে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন দেখে। মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে বংগবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামিলীগ কি তাঁর মূলনীতি থেকে সরে যাচ্ছে! এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এর আগে হাইকোর্টের সামনে লেডি অপ জাস্টিস এর ভাস্কার্য নিয়ে বলেছেন। এখন হুঙ্কার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কার্য নিয়ে। এরা মূর্তি আর ভাস্কার্যের পার্থক্য মানতে নারাজ। যদিও পৃথীবির সব দেশেই এমনকি বিভিন্ন মুসলিম দেশেও ইতিহাস সংরক্ষনে ভাস্কার্যের ব্যবহার রয়েছে। অবস্তাদৃস্টে মনে হচ্ছে ভাস্কার্য এদের মুল টার্গেট নয়। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে। রয়েছে পাকি গোয়েন্দা আই এস আই এর গেইম প্লান আর জামায়তের অঢেল টাকার খেলা। এর আগে শাপলা চত্বর তৈরি করতে হেফাজতের নেতাদের হাতে নিয়ে সরকার পতনের ডাক দিয়েছিল তারা। তবে এবারের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার তারা আর রিস্ক নিতে চায় না। তাই তারা নিজেরাই সরাসরি হেফাজত নেতৃত্বে ঢুকে পড়েছে। সম্প্রতি হেফাজতের প্রয়াত আমির আহমেদ শফির মৃত্যু ঘিরে তাদের তৎপরতা এবং হেফাজতের নতুন কমিটিতে জামায়েত-শিবিরের প্রাক্তন নেতাদের স্থান পাওয়া দেখলে সেটি বুঝতে কারো কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিস্টিত পাকিস্থানে ধর্ম নিরেপক্ষ নতুন জাতি ও দেশ প্রতিস্টা করা কঠিন, চ্যালেঞ্জিং ও অসম্ভব ছিল। ১৯৭১ সালে সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন বঙ্গবন্ধু অসীম সাহস আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে। বর্তমানে সেই একি সাম্প্রদায়িক দানবীয় শক্তিকে মোকাবেলা করা ৭১ এর মত কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হবে বলে সাধারন মানুষ মনে করেনা। শুধু প্রয়োজন সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্ব। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কোন ধর্মের জন্য মঙ্গল বয়ে আনেনা। এরা ইসলামের ক্ষতি বৈকি লাভ করে দিবেনা। এদেশের আপামর জনগন অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপ্রিয়। ভারতীয় উপমহাদেশ তথা এদেশে এসব সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির হাত ধরে ইসলাম আসেনি। ইসলাম এসেছে সুফী সাধকের হাত ধরে। সুফী সাধকেরা ধর্ম প্রচারের জন্য রুহানি শক্তি ব্যাবহার করেছেন। ধর্মীয় গোঁড়ামিকে প্রশ্রয় দেয়নি, ধর্মীয় উন্মাধনা তৈরি করে ফায়দা হাসিল করেনি।
এই অপশক্তির সবচেয়ে বড় অপপ্রচারের শিকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা।তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চয় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন। আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিশ্বব্যাপি উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তিকে নতুন করে প্রশ্রয় দিবে বলে মনে হয়না। তাছাড়া মুস্টিমেয় মুসলিম নামধারী উগ্রবাদী ছাড়া এদেশের অধিকাংশ মুসলমান শান্তির পক্ষে ও অসাম্প্রদায়িক। তাই এই অপশক্তির বিরোদ্ধে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির একতাবদ্ধ লড়াই সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে। আশার কথা এদের সব ষড়যন্ত্র অতীতেও ভেস্তে গেছে, এবারও যাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।
এম হাবিবুর রহমান
চীফ এঢিটর