বাংলাদেশে জোটের রাজনীতি এখন নিয়ম হয়ে গেছে। বড় দলগুলি দেখাতে চায় কারা কারা তাদের সঙ্গে রয়েছে। কিছু দলের নিবন্ধন আছে কর্মসূচী নেই, সাংগঠনিক শক্তিও নেই তাদের। নেতার পরিচয়েই নাম সর্ব্বস্ব দলের নেতারা বড় দলে জোটভূক্ত হয়ে দালালি করে। এমন রাজনীতি আসলে অনৈতিক। জাতীর কাছে তাদের কোন অঙ্গীকার নেই। এরা জাতি বা দেশের জন্য রাজনীতি করেনা। তাদের মূল লক্ষ্য হলো যে কোন উপায়ে ক্ষমতার সঙ্গে থাকা। নির্বাচন এলে দেনদরবার করে আসনের ভাগ চাওয়া। নমিনেশন বিক্রি করে নগত অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। কিছু মানুষ চড়া মূল্যে দলের টিকিট কিনে। এদের বেশীর ভাগই নির্বাচিত হতে পারেনা। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে সেই পরিচয় বিক্রি করেই নিজেকে রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দেয়। গনমাধ্যমে তাদের প্রচারও হয়। টেলিভিশনে টক শো করে জ্ঞান বিলায় জাতিকে। যাদের সঙ্গে নীতি আদর্শের মিল নেই, যে দলের নেতৃত্বেও তারা পরিচালিত হয়না এমন দলের সাথে ঐক্য করার যূক্তিটি কি? যদি ঐক্যই করতে হয় তাহলে সেই দলের নীতি আদর্শকে ধারন করে দলের কর্মী হয়েই রাজনীতি করা উচিৎ। ভিন্ন দলের আদর্শ প্রচার করা তো দালালী। নামসর্ব্বস্ব এসব দলের কর্মীও নেই ভোটারও নেই। জোটের মুল দলের মার্কা নিয়ে সেই দলের কর্মসুচী বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগনের কাছে ভোট চাওয়া প্রতারনার সামিল। জোটভুক্ত দলের কারনে মুল দলের যোগ্য নেতারা নমিনেশন বঞ্চিত হন। দলের নির্দেশে জোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে একসময় হতাশ হয়ে ছিটকে পরেন দল থেকে। এরাই ভিন্ন ভাষায় কথা বলে, দলের বিপক্ষে অবস্থান নেয়। অথচ দুর্দিনে এরাই দলেকে ধরে রেখেছে হামলা মামলা উপেক্ষ করে। আদর্শের কথা ভুলে শত্রুতায় রূপ নেয় সতীর্থের সঙ্গে। শুরু হয় জেদাজেদী আর শত্রুতা। এমন শত্রুতায় প্রানও গেছে অনেকের।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের মধ্যেও একই চিত্র এখন লক্ষনীয়। বিষয়টি ভাবনার বটে। আওয়ামী লীগ দেশে যে উন্নয়ন করেছে তা প্রচার করে দলীয় কর্মীবাহিনী নির্বাচনে নামলে জোট করেও দলকে হারানো যাবেনা। জোট বিহীন নির্বাচন হলে স্থানীয় নেতারাই দলের কর্মীবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করে এগিয়ে যাবে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কর্মীবাহিনী ঐক্যবদ্ধ থাকলে সব দল মিলে চেষ্টা করেও জয়ী হতে পারবেনা। দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত কর্মীরা নির্বাচিত হয়ে সংসদে গেলে সরকার পরিচালনায় দল থাকবে চাপ মূক্ত। এমন রাজনীতিই প্রত্যাশিত ছিল কারন, জনগন একটি দলের আদর্শ এবং কর্মসূচীকেই সমর্থন করে ভোট দেয়। যারা দলের আদর্শ বিশ্বাস করেনা তাদেরকে মন্ত্রী বানাতে ভোট দেয়না। বাংলাদেশে জোটভুক্ত রাজনীতির বাস্তবতাটি পরিবর্তন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচন করলে দলের যোগ্য নেতাকর্মীরা যেমন সুযোগ পাবে, দলও ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয় নিশ্চিত করবে। অন্য জোটেও এই পদ্ধতি অনুসরন করলে জনগনের রায়েই সরকার গঠনের যোগ্যতা নিশ্চিত হবে। আদর্শহীন জোটের রাজনীতি বন্ধ হওয়া জরুরী।