গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের মোট ২১টি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল আডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হলেও মোট ১৪টি পণ্যের জন্য নতুন করে আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া, আবেদনের প্রক্রিয়ার মাঝে আছে আরও দু’টি পণ্য।
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল শাড়ি ভারতের জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
যদিও কোনও পণ্যের জন্য আবেদন করার অর্থ এই নয় যে সেগুলো জিআই সনদ পাওয়ার মতো যোগ্য বা পাবেই। নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নির্ধারিত হয় যে, কোন পণ্য এই তালিকায় উঠবে।
যাচাই-বাছাইয়ের পর এগুলোর কোনওটি যদি জিআই সনদ পেয়ে যায়, তাহলে তখন সেগুলো বাংলাদেশের নিজস্ব পণ্য হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিতি লাভ করবে।
জি-আই সনদ পাওয়ার আশায় যেসব পণ্য
আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনে’র (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) জিআই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে।
ডিপিডিটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যে ১৪টি পণ্যের জন্য আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলো হলো-
যশোরের খেজুর গুড়
নরসিংদীর লটকন
নরসিংদীর অমৃতসাগর কলা
জামালপুরের নকশীকাঁথা
মধুপুরের আনারস
সুন্দরবনের মধু
মৌলভীবাজারের আগর-আতর
রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম
মুক্তাগাছার মণ্ডা
রাজশাহীর মিষ্টিপান
শেরপুরের ছানার পায়েশ
ভোলার মহিষের কাঁচা দুধ
গোপালগঞ্জের রসগোল্লা
নওগাঁ’র নাগ ফজলি আম
এছাড়া, আবেদনের প্রক্রিয়ার মাঝে আছে আরও দু’টি পণ্য। যথা-
দিনাজপুরের লিচু
টাঙ্গাইলের শাড়ি
কোনও পণ্য কেন জি আই সনদ পায়
কোনও দেশের পরিবেশ, আবহাওয়া ও সংস্কৃতি যদি কোনও একটি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে; সেই সাথে, ভৌগোলিকভাবে ও ঐতিহ্যগতভাবে যে পণ্যগুলোকে ‘নিজস্ব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়, তাহলে সেটিকে ওই দেশের ‘ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
যে সব পণ্য এই স্বীকৃতি পায়, সেগুলোর মাঝে ভৌগোলিক গুণ, মান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকে। একটা পণ্য যখন জিআই স্বীকৃতি পায়, তখন সেটিকে বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডিং করা সহজ হয়।
তখন দেশে বিদেশে ঐ পণ্যগুলোর একটি আলাদা কদর থাকে। শুধু তাই নয়, সনদ প্রাপ্তির পর ওই অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে পণ্যটি একাধারে উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পায়। অন্য কোনও দেশ বা অন্য কেউ তখন আর এই পণ্যের মালিকানা বা স্বত্ব দাবি করতে পারে না।
নিয়ম অনুযায়ী, কৃষিপণ্য, প্রকৃতি থেকে আহরিত সম্পদ ও কুটির শিল্পকে এই সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব জিআই পণ্য আছে, সেখানে এর সবগুলো ধরনই রয়েছে।
জি আই সনদের আবেদন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জি আই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি।
আইন অনুযায়ী, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধনের জন্য কোনও ব্যক্তিসংঘ, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে ডিপিডিটিতে পর্যাপ্ত প্রমাণ ও তথ্য-উপাত্তসহ আবেদন করতে হয়।
আবেদনপত্র জমা দেয়ার পর সেগুলোকে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কোনও ভুলভ্রান্তি থাকলে আবেদনকারীকে পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।
আবেদনপত্রের সাথে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বিবেচনা করার পর সব ঠিক থাকলে সেই জার্নালে প্রকাশ করা হয়। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ যদি সেই পণ্যের বিরোধিতা করতে চায়, তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ দুই মাস সময় ধরা আছে।
এবং এই সবকিছুর সর্বশেষ ধাপ হলো জিআই সনদ বা নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রাপ্তি।
খবর বিবিসি
ডিবিএন/ডিআর/তাসফিয়া করিম