নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিশেষ কিছু কাজে রোবট যথেষ্ট উন্নতি করলেও প্রকাশ্য রাজপথে এখনো তাদের দেখা যায় না। এবার জার্মানিতে রোবট পার্সেল বিলির কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। তবে এটি রাস্তায় পার্সেল বিলি করতে বের হলে সর্বদা সেটির উপর নজর রাখা হবে।
ভবিষ্যতের ডেলিভারি সার্ভিস এমন হতে পারে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে চাকার উপর বাক্স বসানো আছে। কিন্তু তার ভেতরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অনেক হাইটেক ভরা। প্রায় স্বাবলম্বী এই রোবট হয়তো অদূর ভবিষ্যতে জার্মানিতে পার্সেল বিলি করবে। তার নাম টেও।
হে-টেও কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা অশ্বিন রামচন্দ্রন বলেন, এটা একটা কার্গোভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় গাড়ি। একই সঙ্গে হালকা ওজনের বিদ্যুতচালিত যানও বটে। পুরোপুরি ইলেকট্রিক শক্তিতে চলে। সেন্সর ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সঙ্গে অনেক মিল থাকায় সেটি অত্যন্ত নিরাপদ। প্রথম এল-ফোর স্বয়ংক্রিয় গাড়ি হিসেবে আমরা সেটিকে জার্মানির রাজপথে দেখব।
ক্যামেরা ও সেন্সরের দৌলতে রোবট চারিদিকে সবকিছুই দেখতে পায়৷ পথে কোনো বাধাবিপত্তি, পথচারী বা ট্রাফিক লাইটও চিনতে পারে সেই যন্ত্রমানব। তবে একাই পথে নামার ক্ষমতা থাকলেও সেটা কার্যকর করা এখনই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন হে-টেও প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে জার্মানির এক নতুন আইনের আওতায় রাজপথে এল-ফোর স্বয়ংক্রিয় গাড়ির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সব সময়ে তত্ত্বাবধায়ক রাখতে হবে, যিনি রোবটের দিকে নজর রেখে রোবটের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
শুধু এমন রোবট নয়, স্বয়ংক্রিয় বাস, গাড়ি বা ট্রাকও জার্মানির রাজপথে নামতে পারে। প্রশ্ন হলো, এর ফলে রাজপথে বাকি যান বা মানুষ কতটা নিরাপদ থাকবে?
ইনোক্যাম এনআরডাব্লিউ সংগঠনের প্রো. লুৎস একস্টাইন মনে করেন, এটা এই কারণে নিরাপদ, যে সবার আগে প্রস্তুতকারী কোম্পানিকে জার্মান ফেডারেল পরিবহন কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র পেতে হবে। আইন অনুযায়ী নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করলে তবেই কোনো যান সেই সবুজ সংকেত পাবে। চলার সময়েও নিরাপত্তা বজায় থাকে, কারণ আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে যানের উপর নজর রাখা হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে রোবট একা সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সেখান থেকে সাহায্য করা হবে।
টেও কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে তার দায় মালিকের ঘাড়ে পড়বে। টেও-কে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যানপ্রতি একজন করে চালকের আর প্রয়োজন নেই। একজন কর্মী একাধিক রোবট নিয়ন্ত্রণ করবেন। ফলে ব্যায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে যাবে।
ডেভেলপার হিসেবে অশ্বিন রামচন্দ্রনের হাতে আরও অনেক কাজ রয়েছে। এখন তিনি প্রোটোটাইপটিকে আরও নিখুঁত করার চেষ্টা করছেন। কাজটা মোটেই সহজ নয়। হে-টেও কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অশ্বিন অবশ্য বলেন, প্রত্যেকটি বিষয়ই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে আবেগের কারণে আমার বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে হয় না। কঠিন না হলে মজা কীসের!
প্রোটোটাইপটিকে বাক্সে ভরে এক সপ্তাহ আগে ইটালিতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে খোলা রাজপথে টেও কয়েকটি ট্রিপ শেষ করেছে। আধা স্বাবলম্বী এই রোবট আপাতত পুলিশের পাহারায় থাকলেও তাকে দেখে শিশুরা বেশ মজা পাচ্ছে। আগামী বছর আর সেই সুবিধা থাকবে না। টেও তখন একাই পথে নামার অনুমতি পাবে।
ডিবিএন/ডিআর/মাহমুদা ইয়াসমিন