২ ই মে জামায়াতে ইসলামি ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ (এ বি পি) নামে নতুন দল গঠন করেছে। ২ ই মে কে ঘিরে তাদের ২ টি মিশন ছিল। এক – নতুন রুপে ও নতুন নামে পুরনো জামায়াতে ইসলামিকে মাঠে নামানো, দুই – যূদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তি দিবস পালন করা। গোয়েন্দা তথ্য মতে এই ২ টি মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য তারা বিশেষ সময়ের অপেক্ষায় ছিল। দেশ এখন করোনা মহামারিতে আক্রান্ত। ত্রান বিতরন ব্যাবস্থা ও করোনা মোকাবেলায় সরকার ও আইন শৃংখলা বাহিনী এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে, তাই এ সময়টা তাদের কাছে মিশন বাস্তবায়ন করার জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছে । বলে রাখা ভালো বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা বা পরিস্থিতি তৈরি হলে সেটার অপ-ব্যাবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া জামায়াতে ইসলামির পুরনো রাজনৈতিক কৌশল। যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকানোর জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে আন্তর্জআতিক লবিস্ট নিয়োগ করা, পেট্রোল বোমা মেরে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারকে বিচার কার্য্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা সহ কিনা করেছে তারা। শেখ হাসিনার দৃঢ়তা আর রাজনৈতিক কৌশলের কাছে পরাজিত হয়ে যখন তাদের সিনিয়র নেতারা যুদ্ধাপরাধের মামলাই ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত হয় এবং দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামির ৭১ সালের বিতর্কিত ভূমিকা বর্তমান প্রজন্মের কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায় তখন তারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ষড়যন্ত্রের পরবর্তী ধাপে কৌশলে আঘাতে থাকে। দলে মতের অমিলের কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা পদত্যাগ করে এবং কিছু কিছু ব্যাক্তি কে আবার বহিস্কার ও করা হয়। এ সবি যে নাঠক এবং নতুন নামে আত্ম প্রকাশের প্রস্ততি তা গত কয়েক দিনের পত্র-পত্রিকার খবর দেখলে বুঝা যায়। জামায়াতে ইসলামির অনেকগুলো বিদেশী শাখা ইতোমধ্যে এ বি পি এর শাখায় রুপান্তরিত হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে বাংলাদেশে ও দেখা যাবে জামায়াতে ইসলামির আঞ্চলিক শাখাগুলো নতুন নামে কমিটি হবে (সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম)। অর্থাৎ নাম নতুন কিন্তু লোকজন সব পুরনো এবং আদর্শ-উদ্দেশ্যও আগেরটি।
৭১ এ খূন ও ধর্ষণ সহ অসংখ্য মানবতা বিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত কূখ্যাত রাজাকার সাঈদীর মুক্তি দিবস পালনের জন্য ও মুক্তি আন্দোলন নিয়ে মাঠ গরম করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে পেক্ষাপট তৈরি করছিল জামায়াতে ইসলামি। মিজান আযহারী, তারেক মনোয়ার, মুফতি ইব্রাহিম ও আমির হামজা সহ আরো কিছু তথাকথিত ইসলামি বক্তাকে দিয়ে ওয়াজের জমায়েতে সাঈদীর মুক্তি দাবী করে তৃনমুলে তার প্রভাব তৈরি করা ও সাঈদীর সাজাপ্রাপ্তি সম্পর্কে জনসাধারনকে দিধান্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। দেরিতে হলেও সরকার বুঝতে পেরে ব্যাবস্থা নেওয়ায় এসব জামায়াতি মোল্লারা আপাতত সাঈদীর মুক্তির ব্যাপারে আর মূখ খুলছে না, তবে ভবিষ্যতে সময় ও সুযোগ বুঝে এসব মোল্লারা আবারো এ দাবী জোরালো করার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামতে পারে। এসব মোল্লারা কথা বলা বন্দ করলেও স্যোসাল মিডিয়ায় এ দাবীকে আন্দোলনে রুপ দেওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে কিছু অনলাইন একটিবিস্টকে ভাড়া করে ফেইসবুকে ও টুইটারে হাজার হাজার ফেইক আইডি তৈরি করে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এটি সত্যি যে স্যোসাল মিডিয়ায় মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়া কঠিন কোন কাজ নয়। এ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা মোকাবেলার জন্য সরকারের সুনির্দিস্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
আশার কথা জামায়াতে ইসলামির দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটি সবসময় সুসংগঠিত নেতাকর্মীর সংগঠন ছিল কিন্ত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জনসমর্থন কখনো পায়নি। ১৯৪৭ সালের পূর্বে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় দলটির প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী ব্রিটিশদের পক্ষ নিয়ে ভারত বর্ষের বিরোধিতা করেছে যেটি তার দলের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলনা। আবার ১৯৭১ সালে বাংলার আপামর জনতা যখন জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখনও দলটি এদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে বিতর্কিত ভূমিকাই অবতীর্ণ হয়। পাকবাহীনির দোসর হয়ে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বিরোধিতা শুরু করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরাজিত শক্তি হিসেবে গা ডাকা দেয়। ৭৫ এ বংগবন্ধু হত্যার পর মেজর জিয়া ক্ষমতায় এসে এদেরকে রাজনিতি করার সুযোগ করে দিয়ে জামায়াতে ইসলামিকে এদেশের রাজনিতিতে প্রতিষ্ঠিত করে দিলেও দলটি কখনও ৩% এর বেশি জনসমর্থন আদায় করতে পারেনি। বিজ্ঞমহল মনে করে নতুন নতুন দল গঠন করে, দেশ বিরোধী হাজারো ষড়যন্ত্র করে কিংবা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে দলটি এবারও সফল হবে না এবং কূখ্যাত রাজাকার সাঈদীকে মুক্ত করতে পারবেনা বরঞ্চ সাঈদীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে রাস্ট্র পক্ষের আপিল সফল হলে ফাঁসীর দড়িতে ঝুলতে হবে কূখ্যাত দেইল্লা রাজাকারকে।
এম হাবিবুর রহমান
চীফ এঢিটর