আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশে শঙ্কা ছড়ানো হচ্ছে। বি এন পি’র তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় সম্ভব নয়। সংবিধান থেকেই তত্ববধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে যে কয়টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার কোনটাই অভিযোগ মুক্ত ছিলনা। এই অভিযোগ সব দলই করেছে। নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে তা কোন পরাজিত নেতারাই স্বীকার করেনি। কিন্তু বাঁধা বিপত্ত্বি মোকাবেলা করে জনগনের সমর্থন অর্জন করাই গনতন্ত্রের নিয়ম। সেই লক্ষ্যে জাতির কাছে অঙ্গীকার থাকতে হবে। বি এন পি’র অঙ্গীকারটি কি?
৭০ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সামরিক বাহিনীর অধীনে। বহু ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ জনগনের ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছে সেই নির্বাচনে এখন যারা তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে নির্বাচন বর্জন করে চলেছে, জাতির কাছে তাদের অঙ্গীকারটি কি? কেমন সরকার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন করছে বি এন পি? সুনির্দিষ্ট কোন কর্মসুচীও তাদের নেই। সব দলেরই একজন মূখ্য নেতৃত্ব থাকে। দল বিজয়ী হলে তিনিই হন প্রধানমন্ত্রী। বি এন পি’র মুখ্য নেতৃত্বটি কে? বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন দলের চেয়ারপার্সন। তিনবার প্রধানমন্ত্রীও ছিলেন। সেই নেত্রী এতিমের অর্থ আত্নসাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী (যদিও এখন বিশেষ ক্ষমা পেয়ে বাড়ীতে অবস্থান করছেন)। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত বেগম জিয়া নির্বাচনের যোগ্যতা হারিয়েছে। ছাড়া পেলেও আগামী ৫ বছর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেননা। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় শারিরিক ভাবেও বেগম খালেদা জিয়া সমর্থ নন।
দলটির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক জিয়া। তিনিও বিভিন্ন অপরাধ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত। এবং পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক আসামী। লন্ডনে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন সুখে। তারেক জিয়ার রাজকীয় জীবনের অর্থের উৎসটিও অজানা। জনগনের সাথে তারেক জিয়ার কোনই সম্পৃক্ততা নেই। প্রবাসে বসে প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে মনগড়া মিথ্যা অভিযোগ করে জননেতা হওয়া যায়না। বিদেশে বসে হুঙ্কার দিলেই জনতার সমর্থন পাওয়া যায়না। যারা এখন তারেক বন্দনায় মত্ত তাদেরকেই প্রমান দিতে হবে কে তাদের নেতা! বি এন পি বিগত ১৪ বছরেও দেশের কোন বিষয়েই যোগ্য নেতৃত্বের প্রমান দিতে পারেনি। জনতার সমর্থন অর্জন হারিয়েছে ব্যপকভাবে। দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়া গ্রহনযোগ্য কোন দাবীও উত্থাপন করতে পারেনি। দলটি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল। জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনসহ বি এন পি’ই এককভাবে বেশী সময় সরকার পরিচালনা করেছে। কিন্তু উল্লেখ্যোগ্য কোন অর্জন নেই দলটির। বি এন পি গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবী করে কিন্তু তারাই দেশে গনতন্ত্র হত্যা করেছে প্রথম। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে হত্যার রাজনীতি করেছে। স্বাধীনতার শত্রু নিষিদ্ধ জামাতকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখনো দলটি জামাতের সঙ্গ ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে পারেনি অজানা কারনে। সরকার পরিচালনাতেও ব্যর্থতা প্রমান করেছে সব ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎ খাতের নৈরাজ্য। সারের দাবীতে গুলি খেয়ে কৃষককে হত্যা, খাম্বা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ শে আগষ্ট আর হাওয়া ভবনের টেন পার্সেন্ট এখনো সবার মুখেমুখে। নেতা কর্মী সাংবাদিক সংখ্যালুঘু কেউ রেহায় পায়নি বি এন পি’র সন্ত্রাস বাহিনীর হাত থেকে। ভাঙ্গা স্যুটকেস থেকে বেড়িয়ে জিয়া পুত্রদ্বয়ের অর্থ সম্পদের হিসাব দিয়েছে গনমাধ্যম। জিয়া পুত্রদের পাচার করা অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরৎ আনা হয়েছে দেশে। বি এন পি নেতারাও এর সবই জানে কিন্তু নৈতিক সাহস নেই বলার। যে কারনে দলটি এখন জনগনের আস্থা হারিয়ে সঙ্কটে। হেরে যাওয়ার ভয়ে নেতারা নির্বাচন বর্জনের আগাম ঘোষনা দিয়েছে আগেভাগেই।
তবে বি এন পি’র অনেক নেতাই নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়। তারা নির্বাচনে অংশ নিবেই। বাধা পেলে দলটির বিভক্তির সম্ভাবনাটিও উড়িয়ে দেওয়া যাবেনা। ইতিমধ্যেই বিভক্তির বিষয়টি গনমাধ্যমেই আলোচনায় এসেছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে এখনই নির্বাচনের চিত্রটি বলা যাবেনা। রাজনীতিতে টিকে থাকার স্বার্থেই বি এন পিকে নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে। এমনটি হলে আগামী নির্বাচন প্রতিযোগিতামুলক হওয়া ছাড়াও গনতন্ত্র শক্তিশালী হবে। প্রত্যাশা করি বি এন পি নেতাদের বোধদ্বয় হবে।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা।