বিনোদন ডেস্কঃ আজ বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০ তুলে দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ পুরস্কার প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারও অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ভার্চুয়ালি যোগদেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র অভিনেতা আনোয়ারা ও রাইসুল ইসলাম আসাদকে আজীবন সম্মাননাসহ ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩২ জনকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ২০২০ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
এবার মোট ২৭টি বিভাগে ৩০টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ সিনেমা হয়েছে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ও গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘গোর’। এর মধ্যে ‘বিশ্বসুন্দরী’ থেকে চিত্রনায়ক সিয়াম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ও ‘গোর’ থেকে চিত্রনায়িকা দীপান্বিতা মার্টিন হয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। সর্বোচ্চ ১১টি পুরস্কার পেয়েছে সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘গোর’। আর একই সিনেমার জন্য ব্যক্তি হিসেবে সর্বোচ্চ ৪টি পুরস্কার পেলেন গাজী রাকায়েত।
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌসের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘আড়ং’। শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র হয়েছে সৈয়দ আশিক রহমানের ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়’।
আজীবন সম্মাননা গ্রহণ করেছেন অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। তবে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাওয়া কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা সশরীর উপস্থিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে পারেননি। তার পক্ষে এটি গ্রহণ করেছেন তার মেয়ে অভিনেত্রী মুক্তি।
‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির জন্য ফজলুর রহমান বাবু পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে পুরস্কার। ‘গণ্ডি’ ছবির জন্য অপর্ণা ঘোষ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে পুরস্কার পাচ্ছেন। মিশা সওদাগর ‘বীর’ ছবির জন্য পাচ্ছেন ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে’ পুরস্কার। ‘গণ্ডি’ ছবিতে ‘শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী’ পুরস্কার পাচ্ছেন মুগ্ধতা মোরশেদ ঋদ্ধি।
‘হৃদয় জুড়ে’ ছবির ‘বিশ্বাস যদি যায়রে’ গানের জন্য বেলাল খান ‘শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক’ পুরস্কার পাচ্ছেন। প্রয়াত মো. সহিদুর রহমান ‘বিশ্বসুন্দরী’র গান ‘তুই কি আমার হবিরে’-এর জন্য ‘শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক’ পুরস্কার পাচ্ছেন। একই গানের গায়ক ইমরান ‘শ্রেষ্ঠ গায়ক’ পুরস্কার পাচ্ছেন।
যুগ্মভাবে ‘শ্রেষ্ঠ গায়িকা’ পুরস্কার পাচ্ছেন দিলশাদ নাহার কনা ‘বিশ্বসুন্দরী’-এর ‘তুই কি আমার হবিরে’ এবং সোমনূর মনির কোনাল ‘বীর’-এর ‘ভালোবাসার মানুষ তুমি’ গানের জন্য।
‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির ‘তুই কি আমার হবিরে’ গানের জন্য ‘শ্রেষ্ঠ গীতিকার’ পুরস্কার পাচ্ছেন কবির বকুল। একই গানের জন্য ‘শ্রেষ্ঠ সুরকার’ পুরস্কার পাচ্ছেন ইমরান।
গাজী রাকায়েত ‘গোর’ ছবির জন্য ‘শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার’ এবং ‘শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার’ পুরস্কার পাচ্ছেন। ‘শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা’ পুরস্কার পাচ্ছেন ফাখরুল আরেফীন খান ‘গণ্ডি’র জন্য। ‘গোর’ ছবির জন্য ‘শ্রেষ্ঠ সম্পাদক’ পুরস্কার পাচ্ছেন মো. শরিফুল ইসলাম। একই ছবির জন্য ‘শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক’ পুরস্কার পাচ্ছেন উত্তম কুমার গুহ।
‘শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক’ পুরস্কার যৌথভাবে পাচ্ছেন পংকজ পালিত ও মো. মাহবুব উল্লাহ (নিয়াজ) ‘গোর’ ছবিতে। একই ছবির জন্য ‘শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক’ হিসেবে কাজী সেলিম আহম্মেদ, ‘শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা’-য় এনামতারা বেগম এবং ‘শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান’-এ মোহাম্মদ আলী বাবুল পুরস্কার পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ও সর্বোচ্চ পুরস্কার হচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, অভিনেত্রী, খল-অভিনেতা, পার্শ্বচরিত্রে অভিনেতা-অভিনেত্রী, শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী, সংগীতশিল্পী (নারী-পুরুষ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালকসহ মোট ২৭টি বিভাগে দেওয়া হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ১৯৭৫ সালে ১২টি বিভাগে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। ২০০৯ সাল থেকে যুক্ত হয় আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরি।
এক নজরে পুরস্কারগুলোঃ
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র- যৌথভাবে ‘গোর’ (গাজী রাকায়েত, ফরিদুর রেজা সাগর) ও ‘বিশ্বসুন্দরী’ (অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু)
শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র- আড়ং
শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র- বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক- গাজী রাকায়েত হোসেন (গোর)
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা- সিয়াম আহমেদ (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- দীপান্বিতা মার্টিন (গোর)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা- ফজলুর রহমান বাবু (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী- অপর্ণা ঘোষ (গণ্ডি)
শ্রেষ্ঠ খল অভিনেতা- মিশা সওদাগর (বীর)
শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী- মুগ্ধতা মোর্শেদ হৃদ্ধি (গণ্ডি)
শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার- শাহাদৎ হাসান বাধন (আড়ং)
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক- বেলাল খান (হৃদয় জুড়ে)
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক- প্রয়াত সহিদুর রহমান (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ গায়ক- ইমরান মাহমুদুল (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা- যৌথভাবে দিলশাদ নাহার কনা (বিশ্বসুন্দরী) ও সোমনুর মনির কোনাল (বীর)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার- কবির বকুল (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ সুরকার- ইমরান মাহমুদুল (বিশ্বসুন্দরী)
শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার- গাজী রাকায়েত (গোর)
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার- গাজী রাকায়েত (গোর)
শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা- ফাখরুল আরেফীন খান (গণ্ডি)
শ্রেষ্ঠ সম্পাদক- শরিফুল ইসলাম (গোর)
শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক- উত্তম কুমার গুহ (গোর)
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক- যৌথভাবে পঙ্কজ পালিত ও মাহবুব নিয়াজ (গোর)
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক- কাজী সেলিম আহমেদ (গোর)
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা- এনাম তারা বেগম (গোর)
শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান- মোহাম্মদ আলী বাবুল (গোর)।