বাংলাদেশের রাজনীতি মুলতঃ দুই ভাগে বিভক্ত, একটি আওয়মী লীগ আর, অন্যটি আওয়ামী লীগ বিরোধী। যারা দিতীয় পক্ষের তারা, কখনোই জাতীর পিতা, বংগবন্ধু শব্দ উচ্চারন করেনা। বংগবন্ধুকে শুধু শেখ মুজিব বলে সম্বোধন করে। কেউ কেউ তাচ্ছিল্য করেও বলে। অথচ বংগবন্ধু উপাধীটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রদত্ব এবং স্বাধীনতার আগেই। ১৯৬৯ সালের ২২ শে ফেব্রূয়ারী রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত বিশাল জনসভায় এই উপাধি প্রদান করা হয়। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহাম্মেদ এই উপাধি প্রদান করেন। এই উপাধি যথার্থ ছিল কারন, বংগবন্ধুই ছিলেন একমাত্র নেতা যিনি আমরন শুধু জাতীর কথাই ভেবেছেন। ১৯৬৯ সালেই বংগবন্ধু পুর্ব বংগের নাম রাখেন বাংলাদেশ।জাতীর পিতাও বলা হয়েছে ১৯৭০ সালের ৩ রা মার্চ। পল্টনের জনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালিয়ের আরেক ভিপি আ স ম আব্দুর রব এই ঘোষনা দেন। সেই আ স ম আব্দুর রবই প্রথম বংগবন্ধুকে শেখ মুজিব বলে অশোভন বক্তৃতা করেছে। জয় বাংলা শ্লোগানটিও নিষিদ্ধ হয়ে যায় ৭৫ এর ১৫ ই আগষ্টের পরে। অথচ স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় বাংলা শ্লোগানই শক্তি যুগিয়েছে বুলেটের মত। ৭৫ সালে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনী মূশতাক আর জিয়াউর রহমান দেশের ইতিহাসটিকেই পাল্টে দিতে চেয়েছে। ৭৫ এর পরবর্তি প্রজন্মকে জানতেই দেয়নি কে ছিলেন বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নব্য শাসকরা মুছে দিলেও দেশের মানুষে হৃদয়ের মনিকোঠায় ধারন করে রেখেছে জাতীর পিতা বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭১ সালের ৫ই এপ্রিল যুক্ত রাজ্যের News magazine প্রচ্ছদ ছাপিয়ে বংগবন্ধুকে political poet (রাজনৈতিক কবি) আখ্যা দিয়েছে।
২৩ মে ১৯৭৩ বিশ্ব শান্তির জন্য বংগবন্ধু কে জুলিও কুরি পদকে ভুষিত করেছে। যারা এই পদক পেয়েছেন তাদের মধ্যে মার্টিন লুথার কিং, নেলস্যন মেন্ডেলা, ফ্রিদ্রেল ক্যষ্ট্রো, ইয়াসির আরাফাত এবং চিলির আলেন্দ্রে অন্যতম। ৭৩ এ আলজিয়ার্সের জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে গিয়ে বংগবন্ধু দ্যর্থহীন কন্ঠে উচ্চারন করেছেন “পৃথিবীটা দুই ভাগে বিভক্ত। এক দিকে শোসক আর অন্যদিকে শোসিত। আমি শোসিতের পক্ষে”। সেই থেকে বংগবন্ধু বিশ্বের নিপিড়িত মানূষেরও নেতা হয়ে যান। চক্ষুশুলে পরিনত হন সম্রাজ্যবাদি শক্তির। বিশ্ববাসী বংগবন্ধুকে বিশ্ব নেতা হিসাবে চিহ্নিত করলেও দেশের অভ্যান্তরের শৈরশাসক আর স্বাধীনতা বিরোধীরা বংগবন্ধুর নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। জাতীর পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করেই ক্ষ্যন্ত হয়নি, জাতীর পিতার শাহাদত বার্ষিকিতে মিথ্যা জন্মদিন বানিয়ে, এক মন ওজনের কেক কেটে উপহাস করেছে। ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে একজন অখ্যাত মেজরকে বংবন্ধুর স্থানে প্রতিষ্ঠিত করার। দেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দুঃসাহস দেখিয়েছে স্বাধীনিতা বিরোধীরা। জাতীর জনকের ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া দুই কন্যাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দেশে এবং বিদেশে। নতুন প্রজন্ম জানতেই পারেনি স্বাধীনতার পটভুমি। প্রভু রাষ্ট্রের মদদপুষ্ট হয়ে স্বাধীনতার অংগীকার ভুলিয়ে দিয়েছে জাতীকে। কিন্তু ইতিহাস নির্মম। সত্য লুকিয়ে রাখা যায়না। সব সত্য বেড়িয়ে গেছে স্বাক্ষ্য প্রমানসহ। ইতিহাসের প্রয়োজনেই এখন বিচার হতে হবে আর, তা হলেই মরনোত্তর বিচার হবে খুনীদের। শুধু খুনী নয়, বিচার হবে নেপথ্যে যারা মদদ যুগিয়েছে তাদেরও।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরেন্টো, কানাডা
১ সেপ্টম্বর ২০২০।